১. ইসলামের বিভিন্ন বিধানের দিকে তাকালে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, মানুষের সাতটি অঙ্গের সঙ্গে ইসলামের বিধান জড়িয়ে আছে। যেমন—জবান, চোখ, কান, মস্তিষ্ক, নাক, হাত-পা ও লজ্জাস্থান। এ অঙ্গগুলোর সঙ্গে সঙ্গে জীবনোপকরণ ও পুনরুত্থানের নিয়ম-কানুনের সম্পর্ক রয়েছে। আর সেগুলোও দুমুখী। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলার হুকুমের অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের জন্য সাত জাহান্নামের রাস্তা তৈরি করে। আবার এগুলোর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুগত হয়ে ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদের উত্তম কাজের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত লাভ করে।
২. অজুতে সাতটি অঙ্গ ধৌত করার দ্বারা সাত প্রকার গুনাহ থেকে তাওবা করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং খুব পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’
উপরোক্ত আয়াতে প্রত্যেক পবিত্রতা অর্জনকারীকে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হওয়া এবং গুনাহ বর্জন করার প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। সুতরাং সাতটি অঙ্গকে অজুর জন্য নির্ধারিত করা বান্দাকে সাত ধরনের গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেন মানুষ জাহান্নামের নিদর্শন থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হতে পারে। এ বিষয়টির দিকেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে তারপর কলেমা শাহাদাত পাঠ করে,
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে—সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।’
৩. আল্লাহ তাআলা মানুষকে এমন স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সে যা কিছু চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শ্রবণ করে, নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয়, জিহ্বা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ করে ও হাত দিয়ে স্পর্শ করে, এর প্রভাব অন্তরে পৌঁছে এবং সেখানে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়, যা তার চরিত্রের ওপর প্রভাব পড়ে। মানুষের অন্তর থেকে প্রকাশিত বস্তুর চেয়ে বাইরে থেকে তার অন্তরে প্রবেশকৃত বস্তুর পরিমাণ বেশি। সুতরাং অন্তরের পরিচ্ছন্নতার জন্য সেই সাতটি অঙ্গ ধৌত করা উপকারী, যেগুলো মানুষের অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করে। যেভাবে বাহ্যিক অঙ্গসমূহ ধৌত করার মাধ্যমে তাতে প্রশান্তি, আনন্দ ও জ্যোতি সৃষ্টি হয়, তদ্রূপ অন্তরেও এর প্রভাব সৃষ্টি করে।
এসব কারণে অজুতে সাতটি অঙ্গের পবিত্রতা অর্জনের বিধান দেওয়া হয়েছে।