ডিএমপি নিউজঃ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে ৪ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম- মোঃ হায়দার আলী, মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ নাসির উদ্দিন ও মোঃ আব্দুল কাদের।
গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর ২০২২ খ্রি:) মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি ও কলাবাগান থানার বশিরউদ্দিন রোড এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ২০ লক্ষ ৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার (৩০ অক্টোবর ২০২২) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতে অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের একজন ফোন করে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের কর্মচারি হিসেবে পরিচয় দেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রজেক্টে কনসালটেন্ট পদে চাকুরির প্রস্তাব দেন। এ সংক্রান্তে আলোচনার জন্য ভিকটিম ১৬ অক্টোবর ২০২২ খ্রি: প্রতারকদের দেওয়া ঠিকানা মোতাবেক মিরপুর মডেল থানার মধ্য পীরেরবাগে একটি অফিসে যান। সেখানে ভিকটিমের সাথে গ্রেফতারকৃত মোঃ হায়দার আলীর পরিচয় হয় এবং কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা হয়। পরের দিন তিনি বায়োডাটা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সেই অফিসে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সাথে দেখা করেন। এ সময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করেন। চক্রের ১ সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। সে অন্যান্য সদস্যদের জানায়, তার ভারতীয় বস ১৬ কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা ক্রয় করবে। এসব দ্রবাদি ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ৩০% লাভ হবে। এসব মালের নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে যার জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে উক্ত ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম প্রথমে রাজী না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনের কারণে এক পর্যায়ে তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এজন্য তিনি ১৯ অক্টোবর প্রতারকদের কথা মতো ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে জানায় নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে এবং নমুনা তিনি পছন্দ করেছেন। এরপর গত ২০ অক্টোবর ভিকটিম প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান ভারতীয় বস তাদেরকে ৩০% অগ্রিম বাবদ ৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেছেন। প্রতারকরা ভিকটিমকে জানায় তারা আমদানিকারককে ৩০% অর্থাৎ ৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা দিতে চাইলে ইমপোর্টার পুরো টাকা ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দিবেন না। উল্লেখিত মালামাল ক্রয় করার জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরও ৫০ লক্ষ টাকা দিতে বলেন। একপর্যায়ে ভিকটিম তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন তিনি ডিবি পুলিশের সহায়তা নেন।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেন, তারা একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে প্রতারিত করে ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা স্বল্প শিক্ষিত হলেও তারা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদেরকে স্মার্টলি উপস্থাপন করেন। তাদের সুমিষ্ট কথায় প্রলোভিত হয়ে অনেক বড় বড় কর্মকর্তারাও তাদের ফাঁদে ফেঁসে যান। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণার জাল বিস্তৃত করলেও একই অফিসে দু’একটির বেশি প্রতারণা করে না। এদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। তারা গ্রেফতার হচ্ছেন, জামিন পাচ্ছেন আবার একই কাজে লিপ্ত হচ্ছেন, মর্মে যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্তে মোহাম্মদপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আছে এবং প্রতারক চক্রের অন্যান্য পলাতক সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
অপরিচিত লোকের সাথে পরিচিত হয়েই অতিলোভে নগদ লেনদেন না করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা।
ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার পিপিএম(বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলামের নের্তৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।