ডিএমপি নিউজঃ জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগামী এক বছরের জন্য ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের নতুন কমিটি। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) ও ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি অফিসার ইনচার্জ মতিঝিল থানা মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অফিসার ইনচার্জ তেজগাঁও থানা মোঃ মাজহারুল ইসলাম পিপিএম (বার)। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কিছু দাবি বা সুপারিশ উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হচ্ছে- ১) ইন্সপেক্টর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণী ও সাব-ইন্সপেক্টর তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নতি করায়, আমাদের র্যাংক ব্যাজের বৈষম্য থেকে যাওয়ায় এই বৈষম্য দূর করা সময়ের দাবি। ২) অন্যান্য বাহিনীর মত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অবসরকালীন রেশন ব্যবস্থা চালু করণ। ৩) আমরা সবসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকি, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দেয়ার সুপারিশ। ৪) আর্মড ফোর্সের মত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স ফি মওকুফ করা। ৫) ট্রেনিং এর সময় সার্জেন্ট ও এএসপিদের ইনসার্ভিস হিসেবে বেতন ভাতাদি দেয়া হয়ে থাকি কিন্তু কনস্টবল ও এসআইদের ট্রেনিং ইনসার্ভিস না হওয়ায় বেতন সুবিধা পাইনা। সকলকে ইনসার্ভিস হিসেবে গণ্য করার জন্য দাবি জানানো হয়। ৬) হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের সংশোধন আনতে দাবি জানানো হয়। এ সময় প্রধান অতিথি মনোযোগ সহকারে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের দাবিগুলো শোনেন।
স্বাগত বক্তব্যের পর বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন একটি স্মরণিকা ‘বন্ধন’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে ফুল ও ক্রেস দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের নিজস্ব ওয়েব সাইটের উন্মুক্ত করেন প্রধান অতিথি।
অভিষেক হওয়া নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জনগণের বন্ধু হিসেবে পুলিশ বাহিনীর স্বপ্ন দেখতেন, এখনকার পুলিশ সে জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। কারণ আমাদের পুলিশ কখনো দেশ ও জনগণের কথা ভুলে না। পুলিশ এসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবী ও সুপারিশকে যৌক্তিক। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে আপনাদের সকল দাবী পূরণ হবে, আমরা চিন্তা করছি পুলিশ যেন অন্যান্য বাহিনীর মতো সকল সুযোগ সুবিধা পায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন। দুইটিই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। এই সংগঠনগুলো একত্রে কাজ করলে বাংলাদেশ পুলিশ আরো শক্তিশালী হবে। বর্তমান সরকার পুলিশের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে, পুলিশের পেছনে যে খরচ সরকার করছে সেটা বিনিয়োগ। পুলিশ সকল কাজ দায়িত্ব নিয়ে করছে বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আইজিপি বলেন, প্রায় ২ লক্ষ পুলিশ সদস্যের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন। দেশে অগ্নি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করলে সেটা পুলিশ কঠোর হাতে দমন করেছে। ১৯৭১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেশে যতো ঝড় ঝঞ্চা এসেছে সর্ব প্রথম পুলিশ বাহিনী এগিয়ে এসেছে ।’
‘আপনাদের উত্থাপিত সুপারিশগুলো যৌক্তিক। আমি আপনাদের প্রধান হিসেবে সুপারিশগুলোই সমর্থন জানায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে, ঠিক সেভাবে এখন দেশ থেকে মাদক নির্মূল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের দুইটি সংগঠনকে একত্রে কাজ করতে আহবান জানান।’
বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের উত্থাপিত সুপারিশগুলোকে সমর্থন জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনাদের উত্থাপিত সুপারিশগুলো সময়োপযোগী ও যৌক্তিক। আমি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে আপনাদের দাবিগুলোকে সমর্থন জানাচ্ছি। নব নির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনারাই নিজেদের জীবন বাজি রেখে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। আপনাদের কাছে সকলের প্রত্যাশা অনেক বেশি। পুলিশ বাহিনীর শতকরা ৯৭ ভাগই আপনারা। আপনারা ভালোভাবে সার্ভিস দিলে পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।’
সভাপতির বক্তব্যে মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন ১৯২০ সালে বেঙ্গল পুলিশ এসোসিয়েশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য প্রায় ২ লক্ষ। ইন্সপেক্টর থেকে নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যরাই এই সংগঠনের সদস্য। আজ দীর্ঘ ৯৮ বছর পরে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নতুন এই কমিটির অভিষেক হচ্ছে। যা আমাদের কাছে অত্যান্ত আনন্দের বিষয়। অভিষেক অনুষ্ঠানে উত্থাপিত দাবি বা সুপারিশগুলো পূরণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’ অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এরপর পরই বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে মঞ্চ মাতিয়েছেন নায়িকা অপু বিশ্বাস, পপি, সারিকা, পায়েল, ফেরদৌস, জায়েদ খান, ডি এ তায়েব, নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী, মমতাজ, কনা, সালমা, পথিক নবী ও মুহিন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর চোখ ধাঁধানো ফায়ার ওয়ার্কস সকলকে মাতিয়ে রাখে।
এর আগে নয়া পল্টনে এসোসিয়েশনের নিজস্ব অফিস থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে রাজারবাগে এসে শেষ হয়।