তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক মনিটরিং করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য একটি অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সংস্থার পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছবি ও ভিডিওসহ তার নিজ এলাকার চিত্র তুলে ধরবেন।
এ কাজের সরাসরি মনিটরিং করবেন মেয়রসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে অ্যাপটি তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে বলে জানা যায়।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার অধীনে বর্তমানে পাঁচ হাজার ২১৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু এর পরও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে প্রতিদিন ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পাঁচ হাজার ৭০০টি মিনি ডাস্টবিনও স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। এজন্য করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবহেলাকেই দায়ী করা হচ্ছে। ডিউটি না করে বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের কাজে ফাঁকি রোধে ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেমও চালু রয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মীকে গ্রামীণফোনের একটি করে সিম দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সিম ব্যবহারকারী প্রতিটি কর্মীর সর্বশেষ অবস্থান জানতে পারবেন কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমেই তাদের হাজিরা নিশ্চিত হয়। ফলে দায়িত্বে কেউ অবহেলা করলে সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়বেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। ‘চতুর’ কর্মীরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে হাজিরা নিশ্চিত করেন বলে জানা যায়।
এরপর শতভাগ কাজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাপের মাধ্যমে বিষয়টি মনিটরিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লা ও আবর্জনা জমে থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে মেয়রের কাছে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ নগরবাসীর অনেকে অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি ফেরাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
ডিজিটাল অ্যাপ সিস্টেমের মাধ্যম একজন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মাঠ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রক) তার নির্ধারিত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সড়ক ও এলাকার ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে সকাল সাতটার আগে এই অ্যাপে তার অ্যাকাউন্টে আপলোড করবেন। মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি সরাসরি মনিটরিং করতে পারবেন। এই অ্যাপে সরাসরি দেখার (লাইভ) ব্যবস্থাও থাকবে। কোনও কর্মকর্তা কাজে যোগ না দিয়ে ফাঁকি দিলে নতুন এ অ্যাপের মাধ্যমে ধরা পড়ে যাবেন।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য মেয়রের নির্দেশনা রয়েছে। তিনি নিজেও বিষয়টি সরাসরি তদারকি করেন। কেউ যাতে কাজে ফাঁকি দিতে না পারে সে জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পরিদর্শকদের কাজসহ পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অ্যাপের আওতায় আনা হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. আবু তৈয়ব রোকন বলেন, ‘মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের প্রচেষ্টায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে গতি ফেরাতে একটি অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এর পর উদ্বোধন করা হবে।’