আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পরিচয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ফোন করে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
গ্রেফতারকৃত প্রতারক হলো- মোঃ তারেক সরকার। গত ১৮ জানুয়ারি ২০২২ (মঙ্গলবার) বিকাল ০৪:৩০ টায় পল্টন মডেল থানার পলওয়েল সুপার মার্কেট এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম। এসময় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকট থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ডিভাইস ও সিমকার্ড উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি ২০২২ (রবিবার) বিকাল বেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়কে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক মহোদয়ের পরিচয় দিয়ে একটি নম্বর থেকে গ্রেফতারকৃত প্রতারক মোবাইলে ফোন করে। প্রতারক চাকুরির বিষয়ে সিনিয়র সচিব মহোদয়কে জোর সুপারিশ করে। বিষয়টি সিনিয়র সচিব মহোদয়ের সন্দেহ হলে তিনি ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরপর ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম উক্ত মোবাইল নম্বরের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে, ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক মহোদয়ের নম্বর নয়। এটি একটি প্রতারক চক্রের নম্বর। উক্ত প্রতারক আওয়ামী লীগের স্বনামধন্য প্রেসিডিয়াম সদস্য মহোদয়ের মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক সুনাম ক্ষুন্ন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।
গ্রেফতারকৃত প্রতারককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক গত ২১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন ইনডেক্স প্লাজা মার্কেটে অবস্থিত এক্সচেঞ্জ গ্যালারী নামক মোবাইল ফোনের দোকান হতে Oppo A33 মডেলের একটি ফোন ক্রয় করে। ফোনটি ক্রয় করার সময় সে কৌশলে ঐ দোকান হতে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত একটি রবি নম্বর সম্বলিত সিমকার্ড নিয়ে যায়। উক্ত মোবাইল ফোন এবং নম্বর ব্যবহার করে সে গত ১৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ বিকাল বেলায় আওয়ামীলীগ নেতা জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক মহোদয়ের নাম পরিচয় ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়কে ফোন করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক নরসিংদী জেলা জাতীয়তাবাদী প্রচারদলের সদস্য সচিব। নিজেকে সে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের এপিএস বলে পরিচয় দিত। সে ২০০৬ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ পায় এবং ২০২০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার কারণে চাকুরিচ্যুত হয়। বর্তমানে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ব্যবহার করে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে তদবির বাণিজ্য করে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজ পত্রাদি (যেমন- এডমিট কার্ড, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ প্রতি আর্থিক লেনদেনের হিসাব ইত্যাদি) পাওয়া যায়।
তদন্তকালে জানা যায় যে, ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রুজু হয়েছে। যার মধ্যে নরসিংদী মডেল ও টাঙ্গাইল সদর থানায় যথাক্রমে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুটি মামলাসহ ডিএমপি’র গুলশান থানায় গত ২১/০৪/২০২১ তারিখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারায় একটি মামলা রুজু হয়। এই মামলার এজাহার থেকে জানা যায় যে, প্রতারক গত ০৪/১২/২০২০ তারিখে বাগেরহাট-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব শেখ তন্ময় মহোদয়ের নাম পরিচয় ব্যবহার করে তৎকালীন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জনাব মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন মহোদয়কে হোয়াটস অ্যাপে ফোন করে কারারক্ষী পদে চাকুরির জন্য সুপারিশ করে। এই মামলায় সে গত ২৮/১০/২০২১ তারিখে ৬ মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়।
ডিএমপি’র গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, মিরপুর জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের মোঃ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনা করে প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।