ডিএমপি নিউজ : “সেবা ও সদাচার, ডিএমপি’র অঙ্গীকার”- এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে নানা আনুষ্ঠানিকতায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) উদযাপিত হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এই গৌরবময় পথচলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মহানগরীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে নগরবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বীর পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দেশপ্রেমিক বাঙালি এবং অকুতোভয় বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের মাধ্যমে রচিত হয় স্বাধীনতা অর্জনের কালজয়ী ইতিহাস।
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বলেন, “স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগের এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।” জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং তিনিই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্বপ্নদ্রষ্টা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভিক পদক্ষেপ এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
১৯৭৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ৬,০০০ পুলিশ সদস্য এবং ১২টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ঢাকা মহানগরীর প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ সম্মানিত নাগরিকগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম ৫০টি থানায় বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)-এর সুযোগ্য নেতৃত্বে কাজ করছেন ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি), ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অতি: ডিআইজি), ৫৭ জন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ (এসপি) ৩৪ হাজার অফিসার ও ফোর্স।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ডিএমপির সার্ভিসসমূহ সহজীকরণ এবং দ্রুত স্মার্ট পুলিশিং সেবা প্রদানে বর্তমান কমিশনার মহোদয়ের সৃষ্টিশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল মেসেজ টু কমিশনার (M2C), যার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর সম্মানিত নাগরিকগণ আইনি সেবা, পরামর্শ এবং অপরাধ বিষয়ক তথ্য প্রদানের জন্য ০১৩২০-১০১০১০ অথবা ০১৩২০-২০২০২০ নম্বরে সরাসরি বার্তা প্রদান করতে পারেন।
মহানগরীর সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ, নির্ভয় ও নির্বিঘ্ন ঢাকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে ৮টি ক্রাইম বিভাগ এবং ৫০টি থানা। ২০২৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় অপরাধ দমন ও উদঘাটনে সর্বমোট ২৫,৯০২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমান কমিশনার মহোদয়ের উদ্যোগে ছিনতাই প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। ডিএমপি ক্রাইম বিভাগের মামলা মনিটরিং সেল ৫০টি থানা ৪৭৯টি জনগুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলা আলোচনাপূর্বক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করেছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩৪টি পাবলিক পিটিশন প্রাপ্ত হয়ে প্রত্যেকটির উপর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন ও উদঘাটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার নিমিত্তে ২৫,৯০২টি মামলার সব তথ্য CDMS (Crime Data Management System)-এ সন্নিবেশ করা হয়েছে। সকলের জন্য সমান আইনি সেবা নিশ্চিতকল্পে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্প ডেস্ক থেকে ৪০,১৮২ জনকে সেবা প্রদান তদারকি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মামলার রায় প্রদান এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাজার হার বৃদ্ধিকরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রসিকিউশন বিভাগ আদালত সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম CDMS অর্ন্তভুক্ত করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে গত এক বছর প্রসিকিউশন বিভাগের ত্বত্তাবধানে আদালত কর্তৃক বিচারাধীন মামলার মধ্যে ১৫,৫৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে যেখানে ৪,৭৫৬ জন অপরাধীর সাজা হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ এবং স্থান স্বল্পতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ডিএমপি প্রসিকিউশন বিভাগের উদ্যোগে আদালতের সাথে সমন্বয়পূর্বক ৭৮টি মামলার বিপরীতে ১৪৪টি আলামত নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগের অধীন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস, কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তর, ইন্টারনাল ওভারসাইট, মেসেজ টু কমিশনার (M2C), কেন্দ্রীয় রিসিভ ডেসপাস শাখা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস সেল হতে ২০২৩ সালে মোট ৫৩,২৮৯টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে যার মধ্যে ৭২ ঘণ্টায় ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে ২৬,৪৭৫টি আবেদনের। প্রবাসী লিগ্যাল সার্ভিস সেলে প্রবাসীদের কাছ থেকে ২০২৩ সালে প্রাপ্ত ১৪৫টি অভিযোগের মধ্য থেকে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১১৪টি এবং ৩১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় ৩২,০০০ অফিসার ও ফোর্সের পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, পেনশনসহ সার্ভিস বই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস সেল থেকে নন-গেজেটেড পুলিশ সদস্যদের পিআরএল গমনের পূর্বের মাসেই ২৩৩ জন পুলিশ সদস্যের লাম্পগ্রান্ট বিলের চেক প্রদান এবং মৃত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের অনুকূলে লাম্পগ্রান্ট বিল মঞ্জুর করা হয়েছে। ২৬৩ জন পুলিশ সদস্যের পিআরএল ভোগ শেষে হাজির হওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়মিত পেনশন প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভা থেকে হামলায় নির্মমভাবে নিহত কনস্টেবল মোঃ আমিরুল ইসলামের পরিবারকে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেনশন প্রদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস সেল। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় রিসিভ এন্ড ডেসপাস শাখা হতে গৃহীত ও বিতরণকৃত পত্রের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭ হাজার ৮৯০টি। ডিএমপির পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের গত এক বছরে নিবন্ধনকৃত মোট ব্লাড ডোনারের সংখ্যা ৬,৩৬৮ জন যার মধ্যে পুলিশ সদস্য ১,২৩২ জন এবং সাধারণ নাগরিক ৫,১৩৬ জন। ইন্টারনাল ওভারসাইট উইং গত এক বছরে রুজুকৃত মামলা ও জিডির বাদী এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদনকারীর মধ্যে ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৭৩ জন সেবা প্রার্থীর সাথে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও ফোর্স সরাসরি ফোনে যোগাযোগপূর্বক তাদের মূল্যবান মতামত লিপিবদ্ধ করেছেন।
ডিএমপির ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) জনগরুত্বপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার তদন্তে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। মামলা তদন্তের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য, চোরাইগাড়ি, জাল টাকা, চোরাই মোবাইল উদ্ধারে মাইলফলক অর্জন করেছে। এছাড়াও সাইবার অপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। ডিবির নিরলস প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অনলাইন প্রতারক, অনলাইন জুয়া, ব্লাকমেইলকারী অবৈধ বেটার, হ্যাকার এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী সনাক্ত এবং গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার স্পেসে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রতিরোধ এবং সংঘটিত অপরাধ তদন্ত ডিএমপির ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে গঠন করা হয়েছে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। SIVS++ (Suspect Identification and Verification System) ডাটাবেজের মাধ্যমে সন্দিগ্ধ অপরাধীদের বায়োমেট্রিকসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সিঙ্গেল ক্লিকে কোন ব্যক্তির সকল তথ্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে সংগ্রহপূর্বক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরির নিমিত্তে DRIMS ( DMP Renovated Information Management System) নামে ওয়ানস্টপ প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে। উন্নত মেগাসিটিসমূহের আদলে আধুনিক সার্ভেইল্যান্স ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সমগ্র ঢাকা মহানগরীর ২২১টি স্থানে ৬৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। LOCC প্রকল্পের আওতায় গুলশান বিভাগে ২২১টি লোকেশনে ১,২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরাসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিতকল্পে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং ঢাকার প্রবেশস্থলে স্থাপিত ক্যামেরাসমূহ ANPR (Automatic Number Plate Recognition) প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে।
বিশ্বের ৬ষ্ঠ ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক ইউনিট। বিগত পাঁচ বছরে সড়কে শৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আধুনিক e-Traffic Prosecution ব্যবস্থায় POS ডিভাইসের মাধ্যমে ২৭,২২,২৯৫টি মামলা করা হয়েছে । এছাড়াও ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আজ বিশ্বের রোল মডেল। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিটিটিসি ২৭টি হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যবধি ১,৬১৯টি মামলায় ২২৪৭ জন উগ্রবাদী সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। ২০২৩ সালে সিটিটিসি জঙ্গিবাদে জড়িত ৩৮ জন সদস্যের ডি-রেডিক্যালাইজেশন কাউন্সেলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং ১৭ জন উগ্রবাদীকে পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান করেছে। সিটিটিসি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে ৯টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছে।
ডিএমপির অপারশেনস্ বিভাগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকাভূক্ত ১৬টি সংসদীয় আসনের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন, নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন, ২১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের জন্য স্ট্যাটিক, মোবাইল, স্ট্রাইকিং, স্ট্যান্ডবাই এবং তদারকি ভিত্তিক অফিসার ও ফোর্স মোতায়ন; সর্বোপরি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কর্মসূচি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ণ করে থাকে।
পুলিশ সর্ম্পকে নেতিবাচক ধারণার অবসান ঘটিয়ে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি এবং জনমত গঠনে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অধীন www.dmpnews.org অনলাইন পত্রিকা চালু করা হয় ২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ২১টি খবর পত্রিকাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সর্বমোট ৭১,৫৯,১৩,২৩৩ জন পাঠক অনলাইন পত্রিকাটি পাঠ করেছেন। এছাড়াও বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে তরুণ প্রজন্মের নিকট উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে Dhaka Metropolitan Police, DMP ফেসবুক পেইজটি Verified করা হয় যার বর্তমান Followers ৭ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক। পুলিশের ইতিবাচক উদ্যোগসমূহ জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গত এক বছরে অত্র বিভাগ হতে ১৪টি ডকুমেন্টারি ও ৭৯টি টিভিসি নির্মাণ ও প্রচার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্থ বিভাগ, লজিস্টিকস বিভাগ, ট্রান্সপোর্ট বিভাগ, প্রকিউরমেন্ট ও ওয়ার্কশপ বিভাগ এবং ডেভেলপমেন্ট বিভাগ অবকাঠামো ও ‘সাপোর্ট সার্ভিস’ প্রদানের মাধ্যমে ডিএমপির অন্য সকল বিভাগে প্রাণসঞ্চার করে থাকে। অর্থবিভাগ হতে ডিএমপি ৩৩,০০০ অফিসার ও ফোর্সের বেতন ভাতা IBAS++ সন্নিবেশ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডিএমপির বাজেট বরাদ্দ PPA এবং PPR এর বিধিবিধান পালনপূর্বক ব্যয় নির্বাহ এবং অডিট কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএমপির ডেভেলপমেন্ট বিভাগ হতে ডিএমপি ভবনসমূহ মেরামত এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট বিভাগ গণপূর্ত বিভাগের সাথে সমন্বয়পূর্বক উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানার নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ গ্রহণ করেছে।
ডিএমপি ওয়েলফেয়ার এন্ড ফোর্স বিভাগ এবং পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ফোর্সের ব্যবস্থাপনা, শৃংঙ্খলা, কল্যাণ এবং শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপির ফোর্সদের আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লাইন্সসমূহে নিয়মিত ফায়ার আর্মস প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। ফোর্সদের চিত্তবিনোদন এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ চারটি আঞ্চলিক পুলিশ লাইন্সে নতুন খেলার সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে।
ডিএমপি প্রটেকশন বিভাগ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সাথে সমন্বয়পূর্বক মহামন্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার ঘোষিত বিদেশী ভিভিআইপিগণের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ২০২৩ সালে প্রটেকশন বিভাগ ৮৪ জন বিদেশী ভিভিআইপি ডেলিগেটের নিরাপত্তা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও আলোচ্য সময়ে অন্যান্য বাহিনীর সাথে সমন্বয়পূর্বক দেশে অনুষ্ঠিত ৯টি সম্মেলন এবং ২১টি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদেরকে আবাসিক হোটেল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা এবং গমানাগমনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এস্কর্ট প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ অত্যন্ত সাফল্যের সাথে মহানগরীতে অবস্থিত বিশ্বের ৫০টি দেশের দূতাবাস/হাইকমিশন, এ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনারগণের বাসভবন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে। ডিএমপির সচিবালয় নিরপিত্তা বিভাগ দক্ষতার সাথে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এবং বহিঃবেষ্টনীর নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রীম কোর্টের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএমপির সুপ্রীম কোর্ট এন্ড স্পেশাল কোর্ট সিকিউরিটি বিভাগ অত্যন্ত সুনামের সাথে পালন করে আসছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সংবেদনশীলতা ও অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইমেন সার্পোট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। ২০২০ সালে এই ডিভিশনে কুইক রেসপন্স টিম (QRT) এবং হট লাইন (০১৩২০০৪২০৫৫) সেবা চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্তির পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম উদ্ধারপূর্বক আইনি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অদ্যবধি নারী ও শিশু বিষয়ক ১২১টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে, ৭৬টি পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করা হয়েছে এবং ৩২৫ জন ভিকটিমকে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারে রেখে সেবা প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে মনোরম ছাদবাগান যা ২০২৩ সালে “বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার” অর্জন করেছে।
একটি শক্তিশালী সফল সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্যের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের উন্নয়নে কাজ করছে পিআর এন্ড এইচআরডি বিভাগ। ২০২৩ সালে পিআর এন্ড এইচআরডি বিভাগ থেকে ৪৭টি কোর্সে ১৭৯টি ব্যাচে মোট ৩৩,৮৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ এই নীতিকে ধারণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার প্রতিটি সদস্যকে উত্তম কাজের জন্য পুরষ্কৃত করে থাকে। অপর পক্ষে ডিএমপির কোনো সদস্য যদি আইন ও বিধি পরিপন্থি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অতি সত্ত্বর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
অপরাধ প্রতিরোধ ও নিবারণে পুলিশ ও জনতার সমন্বিত উদ্যোগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে– ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে। বিট পুলিশিং এর আওতায় ৩০৬টি বিটে কর্মরত বিট অফিসারগণ ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত সকল নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে CIMS (Citizen Information Management System) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত CIMS এ ৪,১৪,৮২,৩১৪ জন নাগরিকের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতন, জঙ্গিবাদ প্রভৃতি বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিট অফিসারগণ ২৮,৯৭৮টি উঠান বৈঠক সম্পন্ন করেছেন।
‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরাপদ ঢাকা মহানগরী গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।