ডিএমপি নিউজ : ঢাকার আদালত চত্বর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জঙ্গি সদস্য ছিনতাই চক্রের প্রধান সমন্বয়ক ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তার ওরফে হুসনা।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি.) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ শনিবার (৮ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি.) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর সিএমএম কোর্টের মূল ফটক থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যকে ছিনতাই করা হয়। গ্রেফতারের পর ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তার ওরফে হুসনা জানায় পরিকল্পিতভাবে আনসার আল ইসলামের সদস্যকে ছিনতাই করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা জানিয়েছে, কতদিন আগে এই পরিকল্পনা করে, ছিনতাইয়ের কাজে কোন রাস্তা ব্যবহার করবে, ছিনতাই শেষে কোথায় মিলিত হবে, ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক কী করবে। আর এসব নিয়ে কাশিমপুর কারাগার ও আদালতে জঙ্গিদের সঙ্গে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম শ্রেণী লাভ করে। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় ও পরবর্তীতে সায়মনের মাধ্যস্থতায় আবু সিদ্দীক সোহেলের সাথে তার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য। সোহেলের সাথে বিয়ের পর থেকে সে আরো গভীরভাবে সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামী আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শিখা কারাবন্দী সোহেলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখে।
তিনি আরো বলেন, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের উপর আক্রমণ করে জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই হয়। ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় একাধিক বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখা তাদের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতো।
তিনি বলেন, ঘটনার প্রায় ৬ মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসাবে শিখাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ঘটনার দিন সে সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে পৌঁছে তার বাবার কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
গ্রেফতারকৃত ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তার ওরফে হুসনার বিরুদ্ধে ডিএমপির কোতয়ালী থানায় সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।