নিজের আকাশ, পানি ও স্থল সীমান্ত রক্ষার অধিকার সব দেশেরই রয়েছে। এই অধিকার বলে পারস্য উপসাগরে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান প্রমাণ করেছে নিজ সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষায় তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে হরমুজগান প্রদেশে ইরানের আকাশসীমার মধ্যে অবৈধভাবে মার্কিন ড্রোন অনুপ্রবেশ করলে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা ভূপাতিত করে। মার্কিন ‘গ্লোবাল হক’ ড্রোন ছিল খুবই অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ড্রোন। গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য ইরানের আকাশসীমায় এটি পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল উস্কানিমূলক। আর এ থেকে বোঝা যায়, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রধান হোতা আমেরিকা।
গোয়েন্দা ড্রোন পাঠিয়ে আমেরিকা শুধু যে ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে তাই নয় একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নীতিও লঙ্ঘন করেছে। ড্রোন পাঠিয়ে আমেরিকা হরমুজগান প্রদেশে ইরানের সামরিক অবস্থান ও শক্তি সামর্থ্যের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইআরজিসি’র বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা ভূপাতিত করে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকার এ তৎপরতা ইসলামি ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার চরম শত্রুতার বহি:প্রকাশ। আমেরিকা ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে এবং শেষমেশ ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের স্পর্ধা দেখিয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার নানা পদক্ষেপ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব রীতিনীতির লঙ্ঘন। এ অবস্থায় ইরান জাতিসংঘে আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা ছাড়াও সম্প্রতি আকাশসীমা লঙ্ঘনের জবাব দিয়েছে তেহরান।
এ ব্যাপারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ নিজ দেশের সীমানা রক্ষায় ইরানের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “এরই মধ্যে গোয়েন্দা ড্রোনের সাহায্যে ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে এবং ড্রোন অভিযান নিয়ে আমেরিকা যে মিথ্যাচার করেছিল তারও প্রমাণ দিয়েছি তেহরান।”
মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ‘গ্লোবাল হক’ গোয়েন্দা ড্রোন আন্তর্জাতিক পানি সীমার মধ্যে ছিল। কিন্তু ইরান প্রমাণ করেছে ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল এবং এ কারণেই তা ভূপাতিত করা হয়েছে। পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন এ পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালে মার্কিন ড্রোন যে আন্তর্জাতিক পানিসীমার মধ্যেই ছিল এ বক্তব্যের স্বপক্ষে ওই কর্মকর্তা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
যাইহোক, ইরানে মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন পাঠানোর ঘটনা উস্কানিমূলক ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ অবস্থায় মার্কিন যে কোনো আগ্রাসন মোকাবেলার অধিকার ইরানের রয়েছে। ইরান কোনো যুদ্ধ চায় না কিন্তু শত্রুপক্ষের যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দিতে তেহরান প্রস্তুত রয়েছে।