বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের করতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদেরকে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে প্রস্তুতিও চলছে।
দেশে রোগীরা বিশ্ব মানের সেবা পেলে বিদেশে যাওয়া বন্ধ হবে। যার ফলে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা দেশের সাশ্রয় হবে। এই স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ কাজের অগ্রগিত পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ জুলফিকার রহমান খান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দক্ষিণ কোরিয়ার ই.ডি.সি.এফ-এর অর্থায়নে নির্মিতব্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিরপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম সেন্টার বেইসড এই হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা। বর্তমানে এই হাসপাতালটির “সোর পাইলিং” কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য ২০১২ সালে বর্তমান হাসপাতালের উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৮৩ একর জমি এবং শেরাটন হোটেলের উত্তর পাশে ২ দশমিক ১৩ একর জমি দিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতারের ২.৭৬ একর জমিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন।
জনগণের জন্য বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ই.ডি.সি.এফ-এর অর্থায়নে ১০৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রকল্পের আওতায় ১ম ফেইজ-এ ২টি বেজমেন্টসহ ১১তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। ১৩ তলা হাসপাতাল ভবনটিতে থাকবে ১০০০ শয্যা। দেশের প্রথম সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা চালু হবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে। এ ধরণের হাসপাতাল এই প্রথম। বর্তমানে সিঙ্গাপুর, কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি চালু আছে। নব নির্মিত হাসপাতাল ভবনের প্রথম ফেইজ এ থাকবে স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ ম্যাটারনাল এন্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার , ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিয়াক ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার এবং দ্বিতীয় ফেইজ এ থাকবে, রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার , অফথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার, ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ইত্যাদি।
বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাসহ জনসাধারণ যাতে সাশ্রয়ীমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পায়। এর পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপি কেবিনও থাকবে হাসপাতালটিতে। এই হাসপাতালে কিডনী ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুবিধা থাকবে। এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবার এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। বিশেষ করে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত হবে। সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ নার্স ও ১০ জন কর্মকর্তাকে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা গ্রহণ করবে ২০০০-৪০০০ রোগী।
অন্তঃবিভাগে প্রতিবছর প্রায় ২২০০০ রোগী চিকিৎসা সেবা পাবেন। প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাওয়া ৩০০-৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির মাধ্যমে “বিদেশ নয়, দেশেই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা” দেয়া সম্ভব হবে। চিকিৎসাসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার সংবিধানের এই স্বীকৃত বাণী বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।