জাতিগত সহিংসতায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেবে সরকার। এদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে ২ হাজার একর জমির উপর এটি ক্যাম্পও খোলা হচ্ছে।
রোববার সচিবালয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তবর্তী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হচ্ছে। তাদের বাসস্থানের উপর গোলাগুলি হচ্ছে। অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। ওই সব এলাকার মানুষ অনন্যোপায় হয়ে বাংলাদেশে আসছে। আমাদের বিজিবি, আমাদের কোস্টগার্ড রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সার্বক্ষণিকভাবে প্রচেষ্টায় রয়েছে। তারপরও এরা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। কিছু কিছু সময়ে মানবিক কারণে আমরা ঢুকতে দিচ্ছি, কারণ এরা আহত ছিল। চিকিৎসা দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিতে আমরা চেষ্টায় রয়েছি।’
‘আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অনুপ্রবেশকারীদের রেকর্ড রাখার জন্য একটা ক্যাম্প বসাতে যাচ্ছি। যারা ঢুকবেন তাদের রেজিস্ট্রেশন করব। সবকিছু কক্সবাজারের ডিসি (জেলা প্রশাসক) মনিটর করবেন। যে অফিসারই সেখানে যাবেন জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করেই কাজ করবেন। বিভিন্ন জন যদি বিভিন্নভাবে যায় তবে সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অনুপ্রবেশ করছেন কিংবা ইতোমধ্যে করেছেন, বিজিবি ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনে একটি ছোট্ট স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেব। তাদের বায়োমেট্রিক ও ফটো আমরা নেব। তাদের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমরা একটা ব্যবস্থা করব।’
তিনি বলেন, ‘যারা (রোহিঙ্গা) অনুপ্রবেশ করেছেন আমরা তাদের কুতুপালংয়ের পাশে ২ হাজার একর জমির একটি এলাকায় নিয়ে যাব। সেখানে কাটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি সুরক্ষিত করব। তাদের উপর যাতে কেউ আক্রমণ করতে না পারে, তারাও যাতে বাইর হয়ে না আসতে পারে সেজন্য পুলিশ ও আনসাররা নিরাপত্তার দায়িত্বে খাকবে।’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী সম্প্রতি সময়ে দুই লাখ ৯০ হাজার বা প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘এটা আনুমানিক ফিগার, সংখ্যা হয়তো আরও বেশি হতে পারে। রেজিস্ট্রেশনটা করলে আমরা বলতে পারব কতজন এসেছে।’
‘সঙ্গে সঙ্গে আমরা এটাও প্রচার করব- যারা রেজিস্ট্রেশন না নেবেন তারা কোন ধরণের সহযোগীতা, কোন ধরণের রিলিফ, যে কোন জায়গা থেকে এনজিওদের কোন সহযোগীতা তারা পাবেন না। চিকিৎসা ফ্যাসেলিটিও তারা পাবেন না। সবাইকে (রোহিঙ্গা) অবশ্যই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের এখানে রিফিউজি, যে কয়দিন থাকবে, রিফিউজি হিসেবেই থাকবে। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। নিবন্ধনের সময় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের সদস্যরাও থাকবে।’
রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প এলাকা ছেড়ে দেশের অন্য কোথাও যেতে না পারে সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য কাউকে এরমধ্যে (রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে) ঢুকিয়ে দিতে চাইলে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, অনেকে অনেক প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, সেই প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে কোন বাংলাদেশি যদি এরমধ্যে ঢুকে যায় তাহলে তাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট হারাতে হবে। অন্য কিছুও হতে পারে। যাতে কেউ ভুল পরিচয় দিয়ে এই পরিচয়পত্র না নিতে পারে আমরা সেই জায়গায় কঠোরতা অবলম্বন করব।’
রিলিফ কার্যক্রমটা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সঙ্গে থাকবে আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) ও ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা)।’
বাংলাদেশি যারা চলাফেরা করবে তাদের কি সবসময় জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সেটাই বলব। কারণ ওই এলাকাটায় আমরা অ্যানাউন্স করে দেব- বাংলাদেশিরাও তাদের পরিচয়পত্রের কপি হোক বা অরজিনালটা হোক সাথে নিয়ে যাতে চলাচল করে।’
উপস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, ‘কনসেনট্রেড (পুঞ্জীভূত) ক্যাম্প হবে একটি এবং ওখানে ব্লক হবে। আজকেই (রোববার) জনপ্রশাসন মন্ত্রণায় থেকে সাতজন উপ-সচিবকে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। ওখানে তারা সাতটি ব্লকে একেকজন একেটটার দায়িত্বে থাকবেন।’
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।