টিকা দিয়েই এ বার সারানো যাবে ক্যানসার! কম খরচেই ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব হবে! প্রয়োজন হবে না আর অস্ত্রোপচার বা টার্গেটেড কেমোথেরাপির!
ইঁদুরের উপর টিকা দিয়ে ক্যানসার ‘সারানো’র পরীক্ষা সফল হওয়ার পর মানুষের একটি বিশেষ ধরনের ক্যানসার (লিম্ফোমা)-ও তাতে সারানো যায় কি না, এই জানুয়ারিতে তার পরীক্ষানিরীক্ষা (হিউম্যান ট্রায়াল) শুরু হয়েছে।
গবেষণাটি হয়েছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক রোনাল্ড লেভির নেতৃত্বে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ। ৩১ জানুয়ারি সংখ্যায়।
গবেষকরা দেখেছেন, ইঁদুরের শরীরে গজিয়ে ওঠা টিউমারের আশপাশে থাকা বিশেষ ধরনের একটি রোগ প্রতিরোধী কোষ (টি-সেল)-কে আরও সক্রিয় করে তোলা সম্ভব হচ্ছে ওই টিকা দিয়ে।
সেই টিকা বানানো হয়েছে খুব সামান্য পরিমাণে নেওয়া দু’টি রাসায়নিক যৌগ (ইমিউন স্টিম্যুলেটিং এজেন্ট) দিয়ে।
মূল গবেষক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেভি অবশ্য বলেছেন, ‘‘এর আগে যে সব টিকা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে, সেগুলি গোটা শরীরে কার্যকর করার চেষ্টা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা টিকা দিয়েছি শুধুই টিউমারের আশপাশের এলাকার বিশেষ ধরনের কোষ টি-সেলে। দেখেছি, অনেক ধরনের ক্যানসারই তাতে সেরে যাচ্ছে।’’
এই পদ্ধতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘লোকালাইজড অ্যাপ্রোচ অফ ভ্যাকসিনেশন’।
গবেষকদের দাবি, এই পদ্ধতিতে ক্যানসার অনেক দ্রুত সারে। টিকা বানানোর জন্য দু’টি রাসায়নিক যৌগ (স্টিম্যুলেটিং এজেন্ট)-এরও প্রয়োজন হয় খুব অল্প পরিমাণে। এজেন্টগুলি এক বার প্রয়োগ করলেই কাজ হয়। তাই ওই স্টিম্যুলেটিং এজেন্টগুলি থেকে পরে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। অস্ত্রোপচার বা টার্গেটেড কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয় না।
কলকাতার বিশিষ্ট ক্যানসার-বিশেষজ্ঞ স্থবির দাশগুপ্তের বক্তব্য, টিউমার কোষ (ক্যানসার কোষ) গুলির মধ্যেই থাকে সেই ‘দুষ্ট’ প্রোটিনগুলি। টি-সেল বুঝতে পারে, কোন প্রেটিনের ক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে বা কম। তখনই সেই প্রোটিনকে বেঁধে ফেলতে (ডকিং) ক্যানসার কোষগুলিতে ঢুকে পড়ে টি-সেল। কিন্তু টি-সেলকে পরোয়া না করার উপায় জানা আছে টিউমার কোষগুলিরও। তাই টি-সেলের নজরদারি, সক্রিয়তা সত্ত্বেও টিউমারের বাড়-বাড়ন্ত ঠেকিয়ে রাখা যায় না। রক্তের মাধ্যমে ক্যানসার কোষগুলির গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়াও রোখা সম্ভব হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
তবে নিঃসন্দেহেই এই গবেষণা নতুন পথ দেখিয়েছে। মানুষের উপরেও পরীক্ষা সফল হলে হয়তো আগামী এক দশকেই বাজারে আসতে পারে এই টিকা, বলছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা।