ডিএমপি নিউজঃ অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফেয়ার মার্ট লিমিটেডের ওয়েবসাইট হ্যাক করে অনলাইন অর্ডারের শিপমেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আত্মসাৎকারী হ্যাকার গ্রুপের মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতদের নাম- মোঃ শহিদুজ্জামান ওরফে রনি, মোঃ মাজহার ইসলাম ওরফে রুবেল ওরফে রুমেল ও মোঃ আমিন আজাদ।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ডিএমপি নিউজকে বলেন, অজ্ঞাতনামা হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা ফেয়ার মার্ট লিমিটেডের ওয়েবসাইট হ্যাক করে এডমিন প্যানেলে প্রবেশ করে। তারা অনলাইন অর্ডারের বিভিন্ন তথ্য (শিপিং এড্রেস, মোবাইল নম্বর, পেমেন্ট স্ট্যাটাস) জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করে নামিদামি ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি পণ্য নিজেদের ঠিকানায় গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে। পণ্য ডেলিভারি হওয়ার পরে তারা প্রতিষ্ঠানের পোর্টালে প্রবেশ করে গ্রাহকের পরিবর্তিত তথ্য পুনরায় হালনাগাদ করে। ফলে মূল গ্রাহক পণ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। গ্রাহকগণ অর্ডারকৃত পণ্যটি না পেয়েও মোবাইলে ডেলিভারি সার্ভিস (পেপার ফ্লাই ও ই-কুরিয়ার) এর মাধ্যমে তাদের অর্ডারকৃত পণ্য পেয়েছেন মর্মে ক্ষুদে বার্তা পান। অজ্ঞাতনামা হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে তথ্য পরিবর্তন করে পণ্যগুলো কৌশলে হাতিয়ে নেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি ও ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এ সংক্রান্তে ফেয়ারমার্ট লিমিটেডের পক্ষে জনৈক মোহাম্মদ ফেরদৌস ৫ জুলাই ২০২২ তারিখ বনানী থানায় মামলা রুজু করেন। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
তিনি আরো বলেন, মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। অতঃপর বুধবার (৫ জুলাই ২০২২) ঢাকা ও চাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে হ্যাকিং এর কাজে ব্যবহৃত ০১টি কম্পিউটার, ০৭ টি মোবাইল ফোন, ২৯ টি ভুয়া নিবন্ধিত সীম কার্ড এবং আত্মসাৎকৃত ০১টি রেফ্রিজারেটর, ০১টি টিভি ও ০৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এই গ্রুপের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত শহিদুজ্জামান এবং মাজহার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ব্যক্তির ই-মেইল আইডি হ্যাক করতো। গ্রেফতারকৃত আমিন ভুয়া নিবন্ধিত সীম কার্ড সরবরাহ ও আত্মসাৎকৃত পণ্য বিক্রয় করতো।
গ্রেফতারকৃতদের বনানী থানার রুজুকৃত মামলায় রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মর্মে জানান গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা।
এ সংক্রান্তে কতিপয় পরামর্শ প্রদান করেন গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা। পরামর্শগুলো হলোঃ
১. ক্র্যাক সফট্ওয়্যার ইউজের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
২. বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
৩. সাইবার ক্যাফে বা অন্য কারো কম্পিউটারে নিজের পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
৪. অপরিচিত লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা।
৫. নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা।
৬. শক্তিশালী ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর নির্দেশনায় অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান, বিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।