আসন্ন ঈদুল আজহার সময় কোনও ধরনের অপরাধ যাতে সংঘটিত না হয় সেজন্য নগরবাসীকে সচেতন করতে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় আটটি বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (৭ জুন) জুমার নামাজের সময় এই পরামর্শ দেওয়া হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার এর নির্দেশনায় রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকাতেই এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ডিএমপির উপ-কমিশনার (ক্রাইম) আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বাসিন্দাদের অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যাবেন। এসময় অনেক বাসায় চুরি বা ডাকাতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গত ঈদুল ফিতরের বন্ধের সময় রাজধানীতে প্রায় অর্ধশত বাসায় সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এজন্য এবারের ঈদুল আজহার বন্ধের সময় রাজধানীর বাসিন্দারা যেন সচেতন থাকেন সেজন্য মসজিদে জুমার নামাজের সময় সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আটটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়। এগুলো হলো—গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইন, সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বাসা থেকে বের হতে হবে। আবার অগ্নিদুর্ঘটনারোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনও অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা যাবে না। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। চোর রাতের বেলায় বাসার পেছনের অংশ দিয়ে জানালা ভেঙে চুরি করে। এজন্য বাসার পিছনেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা কাছের আত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। রাতে বা দিনে মাস্ক কিংবা ক্যাপ অথবা একসঙ্গে মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ পরা অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯-এ ফোন দিতে হবে। মোটরসাইকেল চুরি রোধে অ্যালার্ম লাগাতে হবে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। লক করার কাজে স্টিলের তৈরি মেরিন অ্যাংকর চেইন ব্যবহার করতে হবে। মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং চাকাতে উন্নতমানের ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে।
ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় শয়তানের নিশ্বাস বা ডেভিল ব্রেথ নামে এক ধরনের ড্রাগ দিয়ে মানুষকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে অপরাধীরা। এজন্য অপরিচিত কেউ কোনও কার্ড কিংবা কাগজ দেখিয়ে কোনও ঠিকানা বা তথ্য জানতে চাইলে কিংবা রুমাল বা অন্য কোনও কিছু মুখের কাছে আনার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ সরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে আশপাশের লোকজনের সহায়তা নিতে হবে। চোরেরা রাতে অন্ধকার থাকা বাসা সহজে শনাক্ত করে চুরির জন্য টার্গেট করে। এটা নিয়ে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, নগরের বাসিন্দাদের নিরাপদ ঈদের ছুটি কাটিয়ে আসার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই অপরাধ নির্মূল করা যায় না। এজন্য বাসিন্দাদেরও সচেতন থাকতে হয়। কারণ অপরাধের সুযোগ কম থাকলেও অপরাধও কমে আসে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নজরদারি, প্যাট্রলিং, অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের পাশাপাশি নগরবাসীকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে সচেতনতামূলক বয়ান দেওয়া হয়েছে। তথ্য সূত্র: বাংলা টিব্রিউন।