ডিএমপি নিউজঃ উগ্রবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী ছাত্র সংলাপ। রাজধানীর লালবাগে এই ছাত্র সংলাপের আয়োজন করে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
আজ (১৬ জুন) সকাল ১০ টায় লালবাগ এক্সক্লুসিভ কনভেনশন হলে দিনব্যাপী ছাত্র সংলাপের উদ্বোধন করেন মূখ্য আলোচক ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান পিপিএমসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে আগত শিক্ষক ও ছাত্ররা।
উগ্রবাদ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, উগ্রবাদ যেকোন ধরণের হতে পারে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে হামলা হয়েছে। ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান থাকলে সহিংস উগ্রবাদে কেউ জড়াবে না। দাঁড়ি রাখলে, টুপি ও পাঞ্জাবী পড়লে সে উগ্রবাদে জড়িয়ে যাবে তাকে নিয়ে সন্দেহ করতে হবে, এমনটা না। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মধ্য থেকে এই ভূল ধারণা ভাঙ্গতে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু-ধর্মপ্রাণ এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এদেশের মানুষ সহিংস উগ্রবাদ, মানুষকে খুন-জখম করা, ফিৎনা-ফ্যাসাদ করে ইসলামী স্টেট কায়েম করতে চায় না। তারা দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আনতে চায়, কারণ বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে দাওয়াতের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সাথে আলোচনার আগে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথেও সহিংস উগ্রবাদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কাউন্টার টেরোরিজমের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে অপব্যাখ্যাকে ন্যারেটিভ বলে আর সঠিক ব্যাখ্যাকে বলে কাউন্টার ন্যারেটিভ। অথচ হওয়ার কথা ছিল সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ন্যারেটিভ আর অপব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কাউন্টার ন্যারেটিভ। মুসলমান কেন কাউন্টার ন্যারেটিভ করবে, কাউন্টার ন্যারেটিভ করবে ঐসব কথিত জঙ্গিরা। ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এসব ফাঁক ফোকর যাতে না থাকে সে দিকে আমরা চেষ্টা করছি। মুখের কথার থেকে গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় বিশ্ব। বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতার জন্য যার জন্য যেটা প্রযোজ্য সেটা নিয়ে আমরা একাডেমিক গবেষণা করার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে সবাইকে সম্পৃক্ত করে সবার মতামত নেয়ার চেষ্টা করব। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দিবেন আপনারা। কথিত উগ্রবাদীদের টার্গেট মুসলমানরা। তারা চাই বিশ্বে উগবাদ ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের উপর দায় চাপাতে। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ওরা দেশ ও ধর্মের শত্রু।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, উগ্রবাদীরা যে ধর্মকে ব্যবহার করে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে, তারা মূলত ধর্মের বিপক্ষে, ধর্মটাকে হালকা করতে ও ধর্মীয় মতবাদকে ধ্বংস করতে চায়। এই দেশটা আমাদের। এদেশের সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ মুসলমান। আমি বিদেশীদের বলি টেরোরিজমের কোন উপাদান আমাদের দেশে নাই। আমাদের দেশের মুসলমানরা কোন বৈষম্যের শিকার না। পশ্চিমারা মনে করে মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ বৈষম্যের শিকার না।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বিছিন্নভাবে আমাদের দেশে দুই একজন সহিংস উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এটা যাতে করে সফল হতে না পারে, সেজন্য আমরা সকলে একযোগে কাজ করব। আমরা সকলে ধর্মকে সঠিকভাবে পালন করব আর ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান ও ব্যাখ্যা মানুষকে আপনারাই দিবেন। পাশাপাশি সহিংস উগ্রবাদের পথে কেউ চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। তারা আমাদের দেশের মানুষ। আপনাদের কারও চোখে এমন কেউ ধরা পরলে বা জানা থাকলে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বিপথগামী অনেক ছেলেকে বুঝিয়ে তাদের সুপথে ফিরিয়ে বা-মার কাছে দিয়েছি। আমরা আপনাদের নিয়ে আরো একসাথে কাজ করব।
এসময় উগ্রবাদ সম্পর্কে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন সিটিটিসি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম।