ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শনিবার দারুণ জমেছিল ব্যাটে-বলের লড়াই। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট দারুণ সেঞ্চুরিতেও শেষরক্ষা করতে পারলেন না। উত্তেজনার ম্যাচে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে শেষ হাসি হাসে নিউ জিল্যান্ড। ব্র্যাথওয়েটকে থামিয়ে তুলে নেয় ৫ রানের জয়।
এর আগে আবারও নিউ জিল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে ওঠেন কেন উইলিয়ামসন। শেলডন কটরেলের ছোবল এড়িয়ে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৮ রানের ইনিংসে দলকে টানেন অধিনায়ক। নিউ জিল্যান্ড করে ৮ উইকেটে ২৯১ রান।
এক পর্যায়ে ২৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশা হারিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অসাধারণ এক জয়ের জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতেও পারেননি তিনি। এক ওভার বাকি থাকতে ২৮৬ রানে ক্যারিবিয়ানদের থামিয়ে দেয় নিউ জিল্যান্ড।
জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৩৩ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্রিজে ছিল শেষ জুটি। ম্যাট হেনরির প্রথম বল থেকে ২ রান নেন ব্র্যাথওয়েট। পরের তিন বলে হাঁকান তিনটি ছক্কা। চতুর্থ বলে ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে পান বাউন্ডারি। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক।
হেনরির ওভার থেকে ২৫ রান নিয়ে সমীকরণ সহজ করে ফেলেছিলেন ব্র্যাথওয়েট। তবে জিমি নিশামের পরের ওভারে ভুগছিলেন ব্যাটে বলতে করতে। চতুর্থ বলে দুই রান নিয়ে পৌঁছান তিন অঙ্কে। শেষ বলটি ছিল শর্ট। পুল করে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। সীমানায় দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে তাকে থামান ট্রেন্ট বোল্ট। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নাটকীয় জয় পায় নিউ জিল্যান্ড।
শেই হোপ ও নিকোলাস পুরানকে দ্রুত ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেন বোল্ট। তবে ক্রিস গেইল ও শিমরন হেটমায়ারের পাল্টা আক্রমণে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গড়েন ১২২ রানের জুটি।
৪৫ বলে ৫৪ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলা হেটমায়ারকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন লকি ফার্গুসন। পরের বলে কটি বিহাইন্ড করে বিদায় করেন জেসন হোল্ডারকে।
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়ে শেষ হয় গেইলের লড়াই। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৮৪ বলে ছয় ছক্কা ও আট চারে করেন ৮৭ রান।
অ্যাশলি নার্স ও এভিন লুইসকে দ্রুত ফিরিয়ে ম্যাচ নিউ জিল্যান্ডের দিকে ঘুরিয়ে দেন বোল্ট। ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যামস্ট্রিং চোটে মাঠ ছাড়া লুইস ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন আট নম্বরে।
হঠাৎ ধসে দিশেহারা হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কক্ষপথে ফিরিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। কিন্তু নিতে পারেননি জয়ের বন্দরে। ৮২ বলে নয় চার ও পাঁচ ছক্কায় ফিরেন ১০১ রান করে। বাঁহাতি পেসার বোল্ট ৪ উইকেট নেন ৩০ রানে। ফার্গুসন ৫৯ রানে নেন তিনটি।
এর আগে কটরেলের অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হয় ক্যারিবিয়ানদের। দুই ওপেনারই পান গোল্ডেন ডাক। গত আসরের সেমি-ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩৭ রানের ইনিংস খেলা মার্টিন গাপটিলকে ম্যাচের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে ফেরায় ক্যারিবিয়ানরা। দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান কলিন মানরো। টস হেরে ব্যাট করতে নামা নিউ জিল্যান্ড শুরুতেই পড়ে যায় চাপে।
তিন দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতরানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা উইলিয়ামসন হাল ধরেন আবারও। রস টেইলরের সঙ্গে গড়ে তোলেন জুটি। দুজনের সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে নিউ জিল্যান্ড। ৭৫ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন উইলিয়ামসন। পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতকে যান টেইলর, ৬৮ বলে।
অনিয়মিত অফ স্পিনার গেইলের করা ৩৫তম ওভারে মিড অফে হোল্ডারকে ক্যাচ দিয়ে টেইলর ফিরলে ভাঙে ১৬০ রানের জুটি। ৯৫ বলে ৭টি চারে ৬৯ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বড় জুটির সঙ্গীর বিদায়ে পথ হারাননি উইলিয়ামসন। রোচকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা অধিনায়ককে কট বিহাইন্ড করে ফেরান কটরেল। উইলিয়ামসন ১৫৪ বলে ১৪টি চার ও এক ছক্কায় করেন ১৪৮ রান। চমৎকার এই ইনিংস তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ক্যারিয়ারে এটি তার ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি। ৫৬ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার কটরেল। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট নেন দুটি।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন কেন উইলিয়ামসন