বিশ্বকাপের ১২তম আসর বসবে চলতি বছরের ৩০ মে থেকে ইংল্যান্ডে। ১০টি ভেন্যুতে আয়োজিত হবে ম্যাচগুলো। চলবে প্রায় দেড়মাস। বিশ্বকাপের ইতিহাস লেখার পাতাগুলোও অপেক্ষা করছে নতুনদের ঠাঁই দিতে। এই ইতিহাস বইতে ঠাঁই পেয়েছেন অনেকেই। কেউ এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে, সর্বোচ্চ রান করে কিংবা সর্বোচ্চ ক্যাচ নিয়ে। এমন অনেক কিছুই দেখা যাবে আসছে আসরেও। তার আগে জেনে নেয়া যাক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় এখন পর্যন্ত সেরা পাঁচে কারা আছেন।
গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)
তার পুরো নাম গ্লেন ডোনাল্ড ম্যাকগ্রা। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তীদের একজন। ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বে ক্যাঙ্গারুদের হয়ে ২২ গজ মাতিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি সর্বমোট ৯৪৯টি উইকেট শিকার করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৪টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন ডান-হাতি এই পেসার। আর এই ৪টি বিশ্বকাপেই ফাইনালে যায় অস্ট্রেলিয়া। শুধু ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ছাড়া এরপরের তিনবার জিতে হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। আর তিনবারই শিরোপা ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন পূরণ হয় ম্যাকগ্রার।
বিশ্বকাপে ৩৯টি ম্যাচে ১৮.১৯ গড়ে ৭১টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাকে রেখেছে উইকেট শিকারীর শীর্ষে। ২০০৩ বিশ্বকাপে নামিবিয়ার বিপক্ষে ১৫ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেন।
মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তী একজন ক্রিকেটার। পাশাপাশি ক্রিকেট বিশ্বের সফলতম স্পিনারও তিনি। মরা পিচেও বলকে কথা বলাতে ছিলেন পারদর্শী ডান-হাতি এই বোলার। ১৯৯২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে লঙ্কানদের হয়ে ২২ গজ মাতিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি সর্বমোট ১ হাজার ৩৪৭টি উইকেট শিকার করেন।
মুরালিধরন ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৫টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বকাপের অভিষেকেই সোনালী ট্রফি ছুঁয়ে দেখেছেন। অর্থাৎ ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়।বিশ্বকাপে ৪০টি ম্যাচে ১৯.১৯ গড়ে ৬৮টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাকে রেখেছে উইকেট শিকারীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপে সেরা বোলিং করেন।
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের পেস ব্যাটারির অন্যতম সেরা বোলার তিনি। তাকে কিং অব সুইং হিসেবেও চেনে ক্রিকেট বিশ্ব। কিংবদন্তী পেসার ১৯৮৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্ব মাতিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি সর্বমোট ৯১৬টি উইকেট শিকার করেন।
ওয়াসিম ১৯৮৭ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ৫টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়লাভ করে পাকিস্তানের হয়ে সোনালী শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়। ১৯৯৯ সালে অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ আসলেও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়।
বিশ্বকাপে ৩৮টি ম্যাচে ২৩.৮৯ গড়ে ৫৫টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাকে রেখেছে উইকেট শিকারীর তৃতীয়স্থানে। ২০০৩ বিশ্বকাপে নামিবিয়ার বিপক্ষে তিনি ২৮ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেন।
চামিন্দা ভাস (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার পেস অ্যাটাকের অন্যতম নাম। লঙ্কানদের ইতিহাসের সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবেই তাকে গণ্য করা হয়ে থাকে। তার সময়ে নতুন বলে সবচেয়ে কার্যকরী বোলার ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি সর্বমোট ৭৬১টি উইকেট শিকার করেন। ভাস ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ৪টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন।
বিশ্বকাপে ৩৮টি ম্যাচে ২১.৮৯ গড়ে ৪৯টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাকে রেখেছে উইকেট শিকারীর চতুর্থস্থানে। ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেন।
জহির খান (ভারত)
ভারতীয় বোলিং আক্রমণে উইকেটের দু’পাশেই বলকে সুইং করাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি সর্বমোট ৬১০টি উইকেট শিকার করেন। জহির ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৩টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখেন।
বিশ্বকাপে ২৩টি ম্যাচে ২০.৮৯ গড়ে ৪৪টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, যা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাকে রেখেছে উইকেট শিকারীর পঞ্চমস্থানে। ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪২ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেন।