যেকোন সময় ছোট–বড় যেকোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে কখনো কখনো রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তবে কিছু কিছু গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না। আসুন সেই সব রক্ত সম্পর্কে জেনে নেই।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, এই গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না। এগুলো হলো–
B+ (‘বি’ পজেটিভ): পৃথিবীর মাত্র ৯% মানুষের রক্ত ‘বি’ পজেটিভ।‘বি’ গ্রুপের ক্ষেত্রে রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে শুধুমাত্র ‘বি’ এন্টিজেন থাকে এবং রক্তের জলীয় অংশে ‘এ’ এন্টিজেন বিরোধী এন্টিবডি থাকে। এই গ্রুপের রক্তধারীরা ‘বি’ ও ‘ও’ গ্রুপের রক্তধারীরা ‘বি’ ও ‘ও’ গ্রুপের রক্ত নিতে পারে এবং ‘এবি’ ও ‘বি’ গ্রুপধারীকেও রক্ত দিতে পারে।
O- (‘ও’ নেগেটিভ): এই গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে ‘এ’ বা ‘বি’ কোন ধরনের এন্টিজেন থাকে না, তবে রক্তের জলীয় অংশে এন্টিজেন ‘এ’ ও এন্টিজেন ‘বি’ বিরোধী এন্টিবডি থাকে। ‘ও’ গ্রুপধারী কেবলমাত্র ‘ও’ গ্রুপেরই রক্ত নিতে পারে, কিন্তু যে কোন গ্রুপকেই রক্ত দিতে পারে।
A- (‘এ’ নেগেটিভ): বিশ্বের ৬% ভাগ ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ ‘এ’ নেগেটিভ। এই ধরনের রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে শুধুমাত্র ‘এ’ এন্টিজেন থাকে এবং রক্তের জলীয় অংশে এন্টিজেন ‘বি’ এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি থাকে। এই গ্রুপের রক্তধারী ‘এ’ এবং ‘ও’ গ্রুপের যে কারো কাছ থেকে রক্ত নিতে পারে এবং ‘এ’ ও ‘এবি’ এর বাইরে অন্য কাউকে রক্ত দিতে পারে না।
AB+ (‘এবি’ পজেটিভ): পৃথিবীর মাত্র ৪% মানুষের রক্ত ‘এবি’ পজেটিভ। এ গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে ‘এ’ এবং ‘বি’ এন্টিজেন উপস্থিত থাকে এবং রক্তের জলীয় অংশে ‘এ’ ও ‘বি’ এন্টিজেনের বিরুদ্ধে কোন এন্টিবডি থাকে না। এই গ্রুপের রক্তধারী প্রয়োজনে যে কারো রক্ত নিতে পারেন তবে ‘এবি’ ছাড়া অন্যকাউকে রক্ত দিতে পারে না।
B-(‘বি’ নেগেটিভ): পৃথিবীর মাত্র ২% মানুষের রক্ত ‘বি’ নেগেটিভ। ‘বি’ গ্রুপের ক্ষেত্রে রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে শুধুমাত্র ‘বি’ এন্টিজেন থাকে এবং রক্তের জলীয় অংশে ‘এ’ এন্টিজেন বিরোধী এন্টিবডি থাকে। এই গ্রুপের রক্তধারীরা ‘বি’ ও ‘ও’ গ্রুপের রক্তধারীরা ‘বি’ ও ‘ও’ গ্রুপের রক্ত নিতে পারে এবং ‘এবি’ ও ‘বি’ গ্রুপধারীকেও রক্ত দিতে পারে।
AB-(‘এবি’ নেগেটিভ): পৃথিবীর মাত্র ১% মানুষের রক্ত ‘এবি’ নেগেটিভ। এ গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকার গায়ে ‘এ’ এবং ‘বি’ এন্টিজেন উপস্থিত থাকে এবং রক্তের জলীয় অংশে ‘এ’ ও ‘বি’ এন্টিজেনের বিরুদ্ধে কোন এন্টিবডি থাকে না। এই গ্রুপের রক্তধারী প্রয়োজনে যে কারো রক্ত নিতে পারেন তবে ‘এবি’ ছাড়া অন্য কাউকে রক্ত দিতে পারে না।
এই গ্রুপগুলো ছাড়াও বর্তমানে আরেকটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি হল– ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’।
বম্বে ব্লাড: এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিরল রক্তের গ্রুপ। প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র চার জনের শরীরে পাওয়া যায়। বম্বেতে আবিষ্কার করা হয়েছে বলেই এর নাম দেওয়া হয় ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে এর নাম ‘এইচএইচ’ (HH) ব্লাড গ্রুপ।
সাধারণত ‘এ’ গ্রুপের রক্তে এন্টিজেন ‘এ’ এবং এন্টিবডি ‘বি’ থাকে। আবার ‘বি’ গ্রুপের রক্তে এন্টিজেন ‘বি’ এবং এন্টিবডি ‘এ’ থাকে। ‘এবি’ গ্রুপের রক্তে ‘এ’ ও ‘বি’ এন্টিজেন থাকে। কিন্তু কোনো এন্টিবডি থাকে না। এই তিনটি গ্রুপের রক্তেই এন্টিজেন ‘এইচ’ থাকে। আর ‘ও’ গ্রুপের রক্তে শুধু এন্টিজেন ‘এইচ’ থাকে। আর এন্টিবডি থাকে ‘এ’ ও ‘বি’। কিন্তু ‘ও’ পজেটিভ রক্তের গ্রুপে অনেক সময় এন্টিজেন ‘এইচ’ থাকে না। আর একেই বম্বে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।
‘এইচ’ এন্টিবডি থাকার জন্যে অন্য কোনো রক্ত এই গ্রুপের বাহকদের দেয়া যায় না। শুধুমাত্র বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্ত এরা নিতে পারে। অথচ যে–কোনো গ্রুপের মানুষকে বম্বে ব্লাড গ্রুপের বাহকরা রক্ত দিতে পারে।
রক্তের প্রয়োজনে- পাশে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।