দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কথা বন্ধ রেখে এ বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক বাতিলের হুমকি দিলেন কিম জং উন।
গত শুক্রবার থেকে কোরীয় উপদ্বীপে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে সোল ও ওয়াশিংটন। চলবে দু’সপ্তাহ। ‘ম্যাক্স থান্ডার’ নামের ওই মহড়ায় ইতিমধ্যেই ১০০-রও বেশি যুদ্ধ বিমান এনেছে আমেরিকা। পিয়ংইয়্যাংয়ের অভিযোগ, পাল্লা দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করছে দক্ষিণ কোরিয়াও। কূটনীতিকদের দাবি, এতেই খেপেছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক। দীর্ঘ সময়ের বরফ গলিয়ে সবে যখন কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে দুই কোরিয়া, তখন এই সামরিক অনুশীলনকে ‘উস্কানি’ হিসেবেই দেখছে পিয়ংইয়্যাং। এর জেরে গত কালই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক বানচাল করে দিয়েছে কিমের দেশ। এ বার তারা হুমকির মুখে রাখল আমেরিকাকেও।
হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, ১২ জুন সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে এক টেবিলে বসার কথা ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। আজ আচমকা বোমা ফাটালেন কিম। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো নিজে থেকেই পরমাণু অস্ত্র ছাড়তে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আমেরিকা এ ভাবে আমাদের কোণঠাসা করতে থাকলে, আমরা আর আলোচনায় আগ্রহী নই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আদৌ বসব কি না, সেটাও ভাবতে হবে।’’
কিন্তু ট্রাম্প তো সম্প্রতি শুধু প্রশংসাই করছেন উত্তর কোরিয়ার। পরমাণু অস্ত্র ছাড়ার কথায় চাপটা তা হলে দিচ্ছে কে? আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকেই আজ সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন উত্তর কোরিয়ায় উপ-বিদেশমন্ত্রী কিম কিয়ে-গুয়ান। তাঁকে ‘জঘন্য লোক’ বলে আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘অশুভ অভিপ্রায় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’-এর অভিযোগও তুলেছেন গুয়েন। পরমাণু অস্ত্র ছাড়ার ক্ষেত্রে সম্প্রতি ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়াকে। যার অর্থ, আদৌ তারা সব অস্ত্র ছাড়ছে কি না, পরে তা যাচাই করা হবে। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এতেই মেজাজ বিগড়েছে কিমের। হোয়াইট হাউসের অবশ্য দাবি, ট্রাম্প-কিমের বৈঠক নিয়ে তাদের প্রস্তুতি চলছেই।
এর আগে নিজেদের একমাত্র পরমাণু পরীক্ষা কেন্দ্র নষ্ট করে ফেলবেন বলে কথা দিয়েছিলেন শাসক কিম জং উন। ২৩ থেকে ২৫ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভেঙে ফেলা হবে পুঙ্গে-রি। সে জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেনের সাংবাদিকদের আগাম আমন্ত্রণও জানিয়েছিল পিয়ংইয়্যাং। এ বার কি সেটাও বানচাল হয়ে গেল? এমন প্রশ্ন উঠছে কোরীয় উপদ্বীপ থেকেই। যদিও ৭ মে পাওয়া উপগ্রহচিত্র থেকে আমেরিকার একটি ওয়েবসাইট সম্প্রতি দাবি করেছে, সেখানে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ধ্বংসের কাজ।
উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রটির প্রবেশপথ সংলগ্ন একটি রেলপথ তুলে নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। নতুন যে ক’টি সুড়ঙ্গ খোঁড়া চলছিল, সে সব কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত মার্চে। তবু অনেকেই বলছেন, ওই কেন্দ্র এমনিতেই নষ্ট হয়ে যেত। আর কিম সেটা বুঝেই ‘ধ্বংস করার’ তত্ত্ব দিচ্ছেন।
আনুষ্ঠানিক ধ্বংসের কাজ শুরু হতে এখনও সপ্তাহখানেক বাকি। তাই কিমের আগাম তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।আমেরিকার পরমাণু বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ‘‘ওই সময়ে তো সাংবাদিকেরা থাকবেন। তাই তাঁদের সামনে নিজেদের পরমাণু প্রযুক্তির উন্নতি কিছুতেই দেখাতে চাইবেন না কিম। বরং পিয়ংইয়্যাং এমন ভাবে এগোচ্ছে, যাতে বাকি দুনিয়া তখন একটা ভুতুড়ে জায়গা ছাড়া আর কিচ্ছুটি না দেখতে পায়।’’