বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) গ্রুপ পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্ককে হারিয়ে ফ্রান্স সবার আগে শেষ ষোলোর টিকিট কনফার্ম করেছিল এবার। যদিও প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে টিউনিশিয়ার কাছে হারার জন্য সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল দিদিয়ের দেঁশর (Didier Deschamps) শিষ্যরা। তবে রবিবার রাতে পোল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ আটে যেতে কোনও সমস্যায় পড়তে হল না গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। আল থুমানা স্টে়ডিয়ামে দুই ‘গোলমেশিন’ অলিভার জিরুদ (Olivier Giroud) ও কিলিয়ান এমবাপের (Kylian Mbappe) কাঁধে ভর করেই ফ্রান্স ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল পোল্যান্ডকে। ফ্রান্স আবার বুঝিয়ে দিল যে, তারা ফের কামড় বসাতে পারে ট্রফিতে। তারা ভোগাবে বাকি দলগুলিকে।
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের পর ফ্রান্সকে নিয়ে বিরাট কথা বলেছিলেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। এলএম টেন জানান, ‘ফ্রান্স অসাধারণ’ অন্যদিকে এমবাপে আবারও এই বার্তাই দিয়ে রাখলেন যে, আগামীর ফুটবলের বেতাজ বাদশা হতে চলেছেন তিনিই। মন্ত্রমুগ্ধকর জোড়া গোলে চেনালেন জাত।
ফ্রান্স এদিন শুরু থেকেই চেনা আক্রমণাত্মক ফুটবলেরই পথ বেছে নিয়েছিল। ডেম্বেলের ক্রস থেকে জিরুদ গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছিলেন। তবে বিরতির ঠিক এক মিনিট আগেই ফ্রান্স পেয়ে যায় প্রথম গোলের দেখা। এবার মান রাখলেন জিরুদ। এমবাপের স্লাইড থেকে বুলেট শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। এর সঙ্গেই ফ্রান্সের ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়ে নেন। এখন জিরুদই ফ্রান্সের সর্বকালের সর্বাধিক গোলদাতা। দেশের জার্সিতে করে ফেললেন ৫২ নম্বর গোলটি। গোলের পর আঙুল দিয়ে পাঁচ ও দুইও দেখান তিনি। বিগত ১৩ বছর এই রেকর্ড ছিল ফ্রান্সের কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরির। এখন মসনদে এসি মিলানের ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির স্ট্রাইকার। জিরুদ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেই স্পর্শ করেছিলেন অঁরিকে। এদিন তাঁকে ছাপিয়ে ইতিহাসে খোদাই করে নিলেন নিজের নাম।
বিরতিতে ১-০ এগিয়ে মাঠ ছাড়া ফ্রান্সকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ বাকিটা বুঝে নিয়েছিলেন সেই এমবাপে। বছর তেইশের ফরাসি ফরোয়ার্ডকে বিশ্বের অন্যতম সেরাদের দলেই রাখা হয়। তাঁর দৌড়, গোল করার ক্ষমতা দেখেছে ফুটবলবিশ্ব। বলা যেতে পারে তিনি এই এখন ‘হট প্রপার্টি’। ২০১৮ বিশ্বকাপে ছিলেন অসাধারণ ফর্মে। দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন এমবাপে। এবার বিশ্বকাপেও সেই আগুনে ছন্দে। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফ্রান্সকে। কাতারে চলছে প্যারিস সাঁ জাঁ-র তারকার ম্যাজিক শো। এদিন তিনি যে দু’টি গোল করলেন, তা নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা হবে। কারণ বিপক্ষের রক্ষণে ঢুকে বল বসিয়ে দেখে ও মেপে তে-কাঠিতে পাঠালেন।
পোল্যান্ডের গোলকিপার ভয়সেক স্ট্যাশনি এই বিশ্বকাপে চমকে দিয়েছেন। কিন্তু তারও কিছু করার ছিল না এমবাপের সামনে। ৭৪ মিনিটে ডেম্বেলের পাস থেকে এমবেপের ডান পা থেকে ধেয়ে এল মিসাইল। কে রুখবে সেই গোল! এরপর ৯১ মিনিটে প্রায় সেই একই ঢংয়ে গোল করলেন টপ কর্নার থেকে এবার বল বাড়ালেন থুরাম। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক গোল ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে দুই গোল করা এমবাপের চলতি বিশ্বকাপে চলে এল পাঁচটি গোল।
গত বিশ্বকাপে তিনি করেছিলেন চার গোল। বিশ্বকাপে চব্বিশ বছরের নীচে এত গোল করার নজির নেই পেলেরও। ৯ গোল করে ফেললেন এখনই। কে রুখবে এই এমবাপেকে! তিনি আলাদা। তিনি ব্যতিক্রমী। তাও এত কম বয়সে। ম্যাচের ৯৬ মিনিটে পোল্যান্ড পেয়েছিল পেনাল্টি। রবার্ট লেওয়ানডস্কি শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর শট রুখে দেন লরিস। তবে শট নেওয়ার আগে নিজের জায়গা ছেড়ে এগিয়ে যান লেওয়ানডস্কি। ফলে দ্বিতীয়বার পেনাল্টি নিতে বলেন রেফারি। এবার আর হতাশ করেননি লেওয়ানডস্কি। জীবনের শেষ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে গোলে অবদান রাখলেন তিনি।- জি নিউজ