ঢাকার রোজ গার্ডেন বিলাশবহুল বাড়িটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এই খান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এছাড়াও রয়েছে এই বাড়িটির ঐতিহাসিক মূল্য। ঐতিহাসিক এই বাড়ি সংরক্ষণের জন্য ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিয়েছে সরকার।
গতকাল রবিবার গণভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্পত্তির বর্তমান মালিক ও তার সন্তানদের কাছ থেকে এই সম্পত্তি কেনার রেজিস্ট্রিকৃত দলিল গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বাসসের।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস ১৯৩১ সালে পুরান ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেনে ২২ একর জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন। ‘সরকারি ক্রয় আইন’ অনুযায়ী ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে বর্তমান মালিকের কাছ থেকে এ স্থাপনাটি ক্রয় করা হয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ৮ আগস্ট রোজগার্ডেন ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এটি বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। চলতি অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাফিজুর রহমান সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘সরকার ‘সরকারি ক্রয় আইন’ অনুযায়ী বাড়িটি ক্রয় করছে।’
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বর্তমান মালিকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোজগার্ডেনের মূল্য ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী আজ এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ক্রয়ের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল গ্রহণ করলেন।
এ সময় তিনি একটি চেক এবং ঐতিহাসিক ভবনের বিনিময়ে রোজগার্ডেনের মালিককে নগরীর গুলশানে ২০ কাঠা জমিসহ একটি একতলা ভবন বিক্রির একটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিল হস্তান্তর করেন।পরে প্রধানমন্ত্রী রোজগার্ডেনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার জন্য এক হাজার এক টাকা টোকেন মূল্যে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে বাড়িটির দলিল গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার ইতিহাস তুলে ধরতে ঐতিহাসিক রোজগার্ডেনকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, রোজগার্ডেনের একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কেননা, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এখান থেকেই যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, এই দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই ঐতিহাসিক ভবনটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন স্থাপনা নষ্ট হতে দেয়া যায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এর আগে নগর ভবনে একটি জাদুঘর স্থাপন করেছে। তবে এখন সেই জাদুঘরটি রোজগার্ডেন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। তিনি ভবনটির মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে এটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এ সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সচিব মো. শহিদুল্লাহ খন্দকার, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।