ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর বংশাল থানা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজারের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ চোর চক্রের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- আজিজ মোহাম্মদ, রনি হাওলাদার ও মোঃ জাকির হোসেন।
উল্লখ্যে, গত ২৩ এপ্রিল ২০২২ সকাল ১০:২০টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোঃ মাসুদ সারওয়ারের অফিস কক্ষে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকিট বিক্রয় সংক্রান্তে প্রেস কনফারেন্সের সময় টেবিলের উপর থেকে ০২টি মোবাইল ফোন, ওয়ালেটের ভিতর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং নগদ ৪৫ হাজার টাকা অজ্ঞাতনামা চোর/চোরেরা সুকৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্তে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থানায় মামলা রুজু হয়। ঘটনাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান জানান, ঘটনাটি ছায়া তদন্তকালে বুধবার (১৮ মে ২০২২) বিকাল ৫:৩০টায় বংশাল থানার ২৮/১, কপি ঘোষ স্ট্রিট, কসাইটুলি, নয়াবাজার এলাকায় একটি চক্র চোরাই মোবাইল বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় আজিজ ও রনিকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ঐদিন সন্ধ্যা ৬:৪০টায় মতিঝিল থানার ফকিরাপুল গ্লোরী সুপার মার্কেট এলাকা হতে জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার হেফাজত হতে ৮টি মোবাইল ফোন , ১টি মনিটর ও ১টি ভাঙ্গা সিপিইউ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ১৭টি মোবাইল ফোনগুলোর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোঃ মাসুদ সারওয়ারের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন দুইটিও উদ্ধার হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আজিজ একজন কোরআন এর হাফেজ। সে দীর্ঘ ৩৩ বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন নাম করা মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। সৌদি আরবে ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন মালিকের গাড়ির ড্রাইভারের কাজ করতো। ড্রাইভিং কাজ করতে করতে তার গাড়ি চুরির নেশা হয়। সে বিভিন্ন ব্যান্ডের যেমন- BMW, PORSCHE JAGUAR, LEXUS এর মতো দামি গাড়ি চুরি করে। পরবর্তীতে সৌদি আরবে ২০১৫ সালে গাড়ি চুরির মামলায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ২০১৮ সালে সাজা শেষে বাংলাদেশে এসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। কিছুদিন পরে মাদ্রাসায় মোবাইল চুরি করে ধরা পড়লে তার চাকুরি চলে যায়। এরপর সে ঢাকা শহরে চলে আসে এবং বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে।
মোবাইল চুরির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আজিজ দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন, ঢাকা মেডিকেল, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্থান, ধানমন্ডি লেক, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল চুরি করে। সে প্রথমে একটি মোবাইল চুরি করতে মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করে। অতঃপর মাত্র ৪-৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে মালিকের পকেট থেকে মোবাইল চুরি করে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত আজিজ চুরিকৃত মোবাইলগুলো নিয়ে রনি হাওলাদার ও ফকিরাপুলের জাকিরের কাছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রয় করে। জাকির চোরাই মোবাইল গুলো কিছুদিন তার হেফাজতে রেখে লক ভাঙ্গা, আইএমইআই পরিবর্তন করে শহরের সাধারন মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম বিক্রয় ডটকম ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রয় করে। যে সকল মোবাইলের লক ভাঙ্গতে বা আইএমইআই পরিবর্তন করতে না পারে সে সকল মোবাইল গুলোর পার্টস খুলে বিক্রয় করে।
এ সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় মামলা রুজু হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা।