ডিএমপি নিউজ: আমরা যে কেউ যে কোন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে মানসিক চাপে পরতে পারি। সেটা হোক বাসার কিছু কারণ কিংবা অফিসের। মানসিক চাপ খুবই সাধারণ একটি বিষয়। সমাজের প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও ক্ষেত্রে মানসিক চাপ অনুভব করেন। এটা এমন একটা সমস্যা, যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন!
বিভিন্ন কারণে আমরা অনেকেই দিনের বেশির ভাগ সময় মানসিক চাপের মধ্যে কাটাই যার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের উপরেও। মানসিক চাপ থেকে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হজমের সমস্যা এমনকি স্নায়ুর সমস্যাও।
আসুন জেনে নেই কি কি উপায়ে মানসিক চাপ কমানো যায়-
মানসিক চাপ কমাতে যা খাবেন-
- কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন বি আর ভিটামিন ই, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে অত্যন্ত কার্যকর। যখন আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে, তখন আমরা মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো সমস্যায় কম ভুগি। তাই প্রতিদিন অন্তত ৫-৬টা কাঠবাদাম পাতে রাখুন। উপকার পাবেন।
- যদিও অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তবে মানসিক চাপ কাটাতে সামান্য চিনি খেয়ে দেখতে পারেন। এতে আমাদের মস্তিষ্কের উদ্দীপ্ত পেশিগুলো শিথিল হওয়া শুরু করে এবং মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে ডায়বেটিসের আক্রান্ত যারা, তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি একেবারেই উচিৎ নয়।
- মিষ্টি আলু খেলে আমাদের মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তাই মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো সমস্যায় মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে খেতে পারেন। উপকার পাবেন।
- সবুজ সবজি যেমন, শসা, ব্রকলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড আর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের মস্তিস্কে তৃপ্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রতিদিন পাতে রাখুন সবুজ শাক-সবজি। দেখবেন মানসিক চাপের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
মানসিক চাপ কমাতে যা করবেন-
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়। সুখি হরমোন হিসেবে পরিচিত এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। যদি জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় না হয় তবে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। সেটিও চাপ কমাতে কাজে দেবে।
২. ঘুমান: ঘুম শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৩. সঠিকভাবে খান: মানসিক চাপে থাকলে খাওয়ার প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপকে বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিন। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।
৪. শিথিল থাকতে শিখুন: মানসিক চাপের সময় দেহ ও মনকে শিথিল রাখা জরুরি। মানসিক চাপের কারণ সহজেই চলে যাবে না। এটা দূর হতে সময় লাগবে। তাই এসময় নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। মনকে শিথিল রাখতে হালকা ধাঁচের গান শুনুন। আর শরীরকে শিথিল রাখতে স্নান করতে পারেন। পার্লারে বা স্যালুনে গিয়ে মানসিক চাপ কমাতে পারে এ রকম ম্যাসেজ করান।
৫. ডায়রি লিখুন: আপনি হয়তো কখনোই ডায়রি লেখেননি। তবুও এ সময়টায় নোট প্যাড বা ডায়রিতে কিছু লেখার চেষ্টা করুন। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন।
৬. পছন্দের কাজগুলো করুন: হয়তো ছোটো বেলায় গান শিখতেন বা ছবি আঁকতেন। বড় হওয়ার পর কাজের চাপে বা সংসারের বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলায় এগুলো করা হয়ে উঠে না আর। মানসিক চাপের সময় এই পছন্দের কাজগুলো আবার শুরু করুন এবং কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সময় দিন।
৭. নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন: খারাপ চিন্তা হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। ভাবুন যা চাইছেন তা ইতিবাচকভাবেই পাবেন। এটা আপনাকে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে।
৮. নিজেকে গুছান: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে গুছান। জীবনযাপনকে একটি রুটিনের ভেতরে নিয়ে আসুন। খাওয়া, ঘুমানো, কাজ এবং নিজের পছন্দের কাজ-সবকিছুর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন।
৯. কাছের বন্ধুর সাথে কথা বলুন: মানসিক চাপের কারণ নিয়ে কাছের বন্ধুর সাথে কথা বলুন। বন্ধুকে বলুন, আপনাকে সাহায্য করতে। তবে এমন বন্ধুকে বলবেন না, যে আপনাকে বুঝবে না অথবা একপর্যায়ে আপনাকে উপহাস করবে।
১০. নিজের সাথে কথা বলুন: সর্বোপরি নিজের সাথে কথা বলুন। কোন বিষয়গুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে? কী করলে চাপ কম হতো? বর্তমানে কী অবস্থা? এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী করতে পারনে- এগুলো ভাবুন।