খাদ্য দেহের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। শরীর ভাল থাকলে মন ও মেজাজ ভাল থাকে। ফলে, নৈতিক চরিত্রের উন্নতি হয়, আত্মা শক্তিশালী হয়। কোন খাদ্য গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে তা শরীরের স্রষ্টা ব্যতীত অন্য কেউ উত্তমরূপে জ্ঞাত নয়। তাই খাদ্য হালাল এবং হারাম দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। হালাল খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং স্বাস্থ্যহানি হয় না। হারাম খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্যহানি হয় এবং পরিত্যাগ করলে স্বাস্থ্যহানি হয় না। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য বিবেচনা করে মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহ করা কর্তব্য।
১। হাদীস: হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) উত্তম বাসনে বা পাত্রে ভক্ষণ করতেন না। তার জন্য উত্তম রুটি রান্না করা হত না। প্রশ্ন হল, কোন পাত্রে তিনি খেতেন? বলা হল, বড় খাওয়ার পাত্রে। (বোখারী)
২। হাদীস: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (স.)-কে কখনও উত্তম রুটি ভক্ষণ করতে দেখিনি। যে পর্যন্ত আল্লাহর রসূল আল্লাহর সাথে সাক্ষাত না করেছেন সে পর্যন্ত তাঁকে উত্তম রুটি ভক্ষণ করতে দেখিনি। কখনও ভুনা ছাগলের গোশত ভক্ষণ করেননি। (বোখারী)
৩। হাদীস: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) এর সাথে এক ভোজে গিয়েছিলাম। আটার রুটি এবং গোশতের সাথে লাউ রান্না করে খেতে দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ (স.)-কে পাত্রের চতুর্দিক হতে লাউ খুঁজতে দেখলাম। এর পর হতে আমি লাউ পছন্দ করতাম। (বোখারী, মুসলিম)
৪। হাদীস: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেন, খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ রাসূলুল্লাহ্ (স.)-কে সন্তোষ দান করত। (তিরমিজী)
৫। হাদীস: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের চাটনির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল লবণ। (ইবনে মাযাহ্)
৬। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তালবিনাহ’ (ময়দা, দুগ্ধ ও চিনি দ্বারা রান্না করা রোগীর পথ্য বিশেষ) খাদ্যের চাহিদা আংশিক পূর্ণ করে রোগীকে কিছু সান্ত্বনা দান করে। (মুসলিম)
৭। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) হালুয়া ও মধু অধিক পছন্দ করতেন। (বোখারী)
৮। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেছেন, যে পরিবারের কাছে শুষ্ক খেজুর থাকে, তাদের নিজেদের ক্ষুধার্ত বোধ করা উচিত নয়। অন্য বর্ণনায়, হে আয়েশা! যে গৃহে শুষ্ক খেজুর নেই তারা ক্ষুধার্ত। তিনি দুই তিন বার তা বললেন। (মুসলিম)
৯। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেছেন, নিশ্চয়ই ‘আলিয়ার’ (স্থানের নাম) খেজুরে ঔষধ আছে। তা প্রাতঃকালের নাস্তা। (মুসলিম)
১০। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের এমন সময়ও আসত যে, মাসাধিক কাল উনানে আগুন জ্বলত না। সামান্য গোশত ব্যতীত শুধু খেজুর ও পানি ছিল। (বোখারী, মুসলিম)
১১। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মোহাম্মদ (স.)-এর পরিবারবর্গ একাধিক্রমে দু দিন ধরে পেট ভরে উত্তম আটার রুটি খেতে পারেন নি। তন্মধ্যে একদিন খেজুর খেতেন। (বোখারী, মুসলিম)
১২। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত আমরা ইচ্ছা মত খেজুর ও পানি গ্রহণ করতে পারি নি। (বোখারী, মুসলিম)
১৩। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) টাটকা খেজুর সহ তরমুজ খেতেন। (বোখারী, মুসলিম)
১৪। হাদীস: হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর পরিবারবর্গের অধিক জ্বর হলে ‘হাছি’ (এক প্রকার পথ্য) প্রস্তুত করতে আদেশ দিতেন। অতঃপর তা গ্রহণ করতেন এবং বলতেনঃ যেরূপ পানি দ্বারা তোমাদের মধ্যে কেউ মুখ হতে ময়লা দূর করে, তেমনি তা নিশ্চয়ই দুঃখিতের অন্তরে শান্তি দান করে এবং পীড়িতের অন্তর হতে দুঃখ দূর করে। (তিরমিজী)
১৫। হাদীস: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) কখনও কোন খাদ্যের নিন্দা করতেন না। যা ভাল লাগত তা তিনি খেতেন, যা ভাল লাগত না তা খেতেন না। (বোখারী, মুসলিম)
১৬। হাদীস: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি অত্যধিক খাদ্য ভক্ষণ করত। সে ইসলাম গ্রহণের পর কম খেতে লাগল। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর কাছে পৌছলে তিনি বললেন, মুমিন এক আঁত ভরে খায়, আর কাফির সাত আঁত ভরে খায়। (মুসলিম)
১৭। হাদীস: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, দু’জনের খাদ্য তিনজনের জন্য এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বোখারী, মুসলিম)
১৮। হাদীস: হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) তাঁর স্ত্রীদের কাছে চাটনি চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ব্যতীত অন্য কিছু নেই। তিনি তাই আনতে বললেন এবং তা দ্বারা খেতে খেতে বললেন, সিরকার চাটনি কি উত্তম! (মুসলিম)
১৯। হাদীস: হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর সাথে, আমরা মাররা-জাহরান (নামক স্থানে) ‘এরাক’ বৃক্ষের ফল পাড়তেছিলাম। তিনি বললেন, কালোগুলো নিও কেননা তাই উত্তম। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কি মেষ চরাতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এমন কোন নবী ছিলেন কি যিনি মেষ চরাতেন না? (বোখারী, মুসলিম)
২০। হাদীস: হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে পিয়াজ বা রসুন খায়, সে যেন আমাদের কাছে হতে দূরে থাকে (অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে, অথবা সে যেন বাড়ীতে বসে থাকে)। রাসূলুল্লাহ্ (স) এর কাছে কিছু গোশত আনা হলে তার ঘ্রাণ পেয়ে তিনি বললেন, তা তোমার কোন বন্ধুর কাছে নিয়ে যাও এবং খাও, কেননা আমি এমন জনের সাথে আলাপ করি যার সাথে তোমরা আলাপ কর না। (বোখরী, মুসলিম)
২১। হাদীস: হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) কোন লোককে তার সঙ্গীর আদেশ ব্যতীত দুটি খেজুর একত্রে খেতে নিষেধ করেছেন। (বোখারী, মুসলিম)
২২। হাদীস: হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তাবুকের যুদ্ধের ময়দানে রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর কাছে পনীর আনা হলে তিনি ছুরি আনতে বললেন। অতঃপর আল্লাহর নাম নিয়ে তা কাটলেন। (আবু দাউদ)
২৩। হাদীস: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, উত্তম খেজুর বেহেশত হতে আগত এবং এতে বিশেষ ঔষধ আছে। শামুক মান্না জাতীয় এবং তার পানি চোখ রোগের মহৌষধ। (তিরমিজী)
২৪। হাদীস: হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) রান্না করা ব্যতীত পিয়াজ খেতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজী, আবু দাউদ)
২৫। হাদীস: হযরত সালমান (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.)-কে ঘি, পনীর এবং বাদাম সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন, হালাল এ সকল জিনিস যা কুরআনে আল্লাহ হালাল করেছেন। হারাম এ সকল জিনিস যা আল্লাহ্ কুরআনে হারাম করেছেন। যে সকল বিষয়ে তিনি নীরব রয়েছেন তা তিনি ক্ষমা করেছেন। (তিরমিজী)
২৬। হাদীস: হযরত মেকদাম (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের খাদ্য পরিমাপ কর যেন তাতে বরকত হয়। (বোখারী, মুসলিম)
২৭। হাদীস: হযরত আবু আইয়ুব (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে কোন খাদ্য আসলে তিনি তা হতে কিছু ভক্ষণ করতেন অবশিষ্ট যা থাকত আমার কাছে পাঠাতেন। একদিন তিনি কিছুই গ্রহণ না করে খাদ্য-পাত্র পাঠিয়ে দিলেন, কেননা এতে পিয়াজ ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইহা কি হারাম? তিনি বললেন, না, কিন্তু এর গন্ধের জন্য আমি পছন্দ করি না। (মুসলিম)