রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ১। মো: সেলিম (৩৫), ২। আবুল কালাম (২৯), ৩। মো: হকসাব (৪৮), ৪। মো: হযরত আলী ভূইয়া (৫২) ও ৫। মো: বিল্লাল (২৫)।
শনিবার (৯ নভেম্বর ২০২৪) ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানা এবং কুমিল্লার তিতাস ও চান্দিনা থানা এলাকায় ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে লুন্ঠিত লোহার তৈরি ৩৪৭৫ কেজি ওজনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ (যার মূল্য আনুমানিক ৪ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা),বিভিন্ন বোল্টের ১০টি ব্যাটারি, দুটি পুরাতন গ্রাইন্ডিং মেশিন, একটি রুফিং মেশিন, একটি সিলিং ফ্যান, দুটি এডজাস্ট ফ্যান ও ৫০ ফুট ইন্টারনেট ক্যাবল উদ্ধার করা হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১১ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. তারিখে খিলগাঁও থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর ২০২৪ রাত আট ঘটিকা হতে এগারো ঘটিকার মধ্যে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের একটি দল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত কনস্ট্রাকশন সল্যুশনস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে কন্টেইনারের ভেতর আটকে রেখে গোডাউনে থাকা নগদ তিন লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লুট করে। পরবর্তীতে একটি ট্রাক নিয়ে এসে গোডাউনে থাকা আনুমানিক ২৫ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন মালামাল, একটি টিভিএস মোটরসাইকেল, গোডাউনের কর্মচারিদের কাছে থাকা নগদ এক লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা ও কর্মচারিদের ১৫ টি মোবাইল ফোন যার লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির এ ঘটনায় নগদ টাকাসহ যে সকল মালামাল লুট হয় তার আনুমানিক মূল্য ৩৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
থানা সূত্র জানায়, তদন্তাধীন এ মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত ট্রাকটি শনাক্ত করা হয়। পরে গত ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখ বিকেল ৫:০৫ ঘটিকায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার পেট্রোবাংলা ভবনের সামনে অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ট্রাকের ড্রাইভার মোঃ সেলিমকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার গাজীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতিতে জড়িত আবুল কালাম ও মোঃ হকসাবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে লুণ্ঠিত এডজ্যাস্ট ফ্যান, সিলিং ফ্যান, ইন্টারনেট ক্যাবল, গ্রাইন্ডিং মেশিন ও রুফিং মেশিন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম ও মোঃ হকসাবের দেয়া তথ্য মোতাবেক কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার কড়িকান্দি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ হযরত আলী ভূইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত হতে লুণ্ঠিত এস্কাভেটরের ১০টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আরো লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারের লক্ষে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার মাধাইয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ বিল্লালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত হতে লুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রকারের লোহার তৈরি পাত, বীম, প্লেটসহ সর্বমোট ৩৪৭৫ কেজি লোহার মালামাল যার আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সকল মালামাল ভিকটিম নিজের বলে শনাক্ত করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেফতারকৃত ট্রাক ড্রাইভার সেলিম জানায়, সে তার ট্রাকযোগে ১৫/২০ জনের একটি দলসহ ঘটনার দিন কনস্ট্রাকশন সল্যুশনস নামক প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে প্রবেশ করে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মারধর করে উদ্ধারকৃত মালামাল লুট করে তার ট্রাকে করে দলের সদস্যরাসহ কুমিল্লা জেলার তিতাস থানা এলাকায় চলে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম ও মো: হকসাব এর কাছে লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রি করে। পরবর্তীতে ডাকাতির এসব মালামাল আবুল কালাম ও মো: হকসাব গ্রেফতারকৃত হযরত আলী ভূইয়া ও মো: বিল্লাল এর কাছে বিক্রি করে।
প্রসঙ্গত, এ ডাকাতির ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ রাত আটটার দিকে খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ রাসেল, মোঃ মীর হোসেন ও মোঃ আবুল হাসান নামক তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় লুন্ঠিত একটি মোটরসাইকেল ও একটি কম্পিউটারের সিপিইউ উদ্ধার করা হয়েছিল। ডাকাতির এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের খিলগাঁও থানার মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে গ্রেফতারকৃত সেলিম বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ডাকাতিতে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।