অভিবাসন বিরোধী আরেকটি আইন জারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এ বিধিতে আত্মীয় কিংবা পারিবারিক ভিসায় আমেরিকায় আসতে আগ্রহীদের প্রমাণ করতে হবে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেই বিনামূল্যে চিকিৎসা-সেবা গ্রহণ করবেন না অর্থাৎ তারা আর্থিকভাবে সবল। ভিসালাভের পর নিজ দেশ ত্যাগের আগেই স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় তারা ভিসার সুযোগ পাবেন না।
এই বিধির বিরুদ্ধে আদালতে কোন মামলা না হলে ৪ নভেম্বর তা কার্যকর হবে। এর ফলে পারিবারিক কোটায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার বহুল পরিচিত একটি বিধিও প্রশ্নবিদ্ধ হতে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণকারিদেরকে স্বজনের সাথে মিলিত হবার সুযোগ খর্ব হবে বলে মন্তব্য করেছেন অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীরা।
‘এটি মুসলিম ব্যান রীতির মতোই ট্রাম্পের আরেকটি জঘন্য নির্দেশ’-মন্তব্য করেছেন ইমিগ্রেশন এটর্নি ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী। তিনি বলেন, গরিব স্বজনেরাইতো যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আগ্রহী সুন্দর ভবিষ্যত রচনায়। ধনীরা কেন আসবে আমেরিকায়? ধনীরা আসেন সাধারণত: পর্যটক হিসেবে।
এই ঘোষণা জারির সময় এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এসেই যারা সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে চায় এবং যার ফলে ট্যাক্স প্রদানকারি আমেরিকানদের নানা সমস্যা তৈরী হচ্ছে, সেটি লাঘবেই এমন আইনের প্রয়োজন ছিল।
ইতিমধ্যেই যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন কিংবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন অথবা শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। একইভাবে শিশুরাও এ বিধির আওতায় আসবে না বলে ফেডারেল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আরেকটি বিধি জারি করেছিলেন যে, ফুডস্ট্যাম্প কিংবা মেডিকেয়ার গ্রহণকারিরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবেন না। সেটি আদালত আটকে দিয়েছে।
হেলথকেয়ার পলিসি থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কায়সার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’র গবেষণা অনুযায়ী, সিটিজেনদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি অভিবাসীর স্বাস্থ্য বিমা নেই। ৪৫ বছরের কম বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে অবৈধভাবে বসবাসরতদের ৪৫% এরই হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই। অপরদিকে গ্রিনকার্ডধারীর মধ্যেও এ ধরনের ইন্স্যুরেন্সহীন লোকের হার ২৩%। ২০১৭ সালের এ তথ্য অনুযায়ী নাগরিকত্ব রয়েছে এমন লোকজনের ৮% এরই স্বাস্থ্য বিমা নেই।
এ বিধি জারির পর অভিবাসী সমাজে হতাশা নেমে এসেছে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা হুমকি দিয়েছেন আদালতে যাওয়ার।
উল্লেখ্য, পুরনো একটি বিধি অনুযায়ী আত্মীয় কিংবা পারিবারিক সূত্রে ভিসা লাভের সময় সকলকেই গ্যারান্টি দিতে হয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হবে না। সেটি এখনও বহাল থাকলেও তেমনভাবে কার্যকর হয়েছে খুব কম ক্ষেত্রেই। ট্রাম্পের সর্বশেষ এ বিধিতে তারই প্রতিফলন ঘটলেও আর্থিক সঙ্গতির সমর্থনে ডক্যুমেন্ট কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর সম্মতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে ভিসার জন্যে স্পন্সরকারির মাধ্যমে। অর্থাৎ এ বিধি কার্যকর হলে ভিসা পাবার ক্ষেত্রে বিলম্বের পরিধি আরো বাড়বে। বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী সিটিজেনরা তার বোন-ভাইকে স্পন্সর করার পর ১৩ বছরের অধিক সময় অপেক্ষা করছেন।