ডিএমপি নিউজঃ পেশাগতভাবে গৃহকর্মী হিসেবে বাসা-বাড়িতে কাজ করলেও নেশাটা ছিল গৃহকর্তার সর্বস্ব লুট করা। প্রয়োজনে মৃত্যু ঘটাতেও দিধাবোধ হতো না তার। দীর্ঘদিন এহেন অপকর্ম করে অবশেষে ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন নিজগুনে কুখ্যাত গৃহকর্মী শান্তি ওরফে বিউটি ওরফে ময়নার মা ওরফে জান্নাতের মা। ছদ্মবেশ ধরতে এতোগুলো নাম ভিন্ন ভিন্ন বাসায় ব্যবহার করতেন এই দুর্ধর্ষ গৃহকর্মী। তবে এতো নামের মধ্যে শান্তি নামটা ছিল তার বহুল প্রকাশিত নাম।
গত ৯ মার্চ গেন্ডারিয়ার ২৮/বি সতীশ সরকার রোডের তৃতীয় তলার একটি বাসায় ‘জান্নাতের মা’ পরিচয়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে ঢোকেন এই শান্তি। একদিনের মাথায় বয়স্ক গৃহকর্তাসহ বাড়ির অন্যান্যদের খাবারে উচ্চমাত্রায় চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে ২৫ ভরি স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যান তিনি। এই ঘটনায় মামলা হলে ১৪ মার্চ ইকুরিয়ায় অভিযান চালিয়ে শান্তিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।
এখানেই শেষ না, পুলিশের তদন্তে এই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে উন্মোচিত হয় নানান চাঞ্চল্যকর ঘটনা। গ্রেফতারকৃত শান্তি ওরফে জান্নাতের মা ২০১৬ সালে রাজশাহী শহরে একটি বাসায় খাবারের সাথে উচ্চমাত্রায় চেতনানাশক মিশিয়ে গৃহকর্তা হত্যা ও অর্থ সম্পদ লুটসহ এমন কয়েকটি ঘটনায় পলাতক আসামী ছিলেন। জানা যায় এই গৃহকর্মী খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা হান্নান ও তার স্ত্রী সেলিনা হান্নানকে অচেতন করেছিলেন। এরপর ওই বাসা থেকে প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তিনি চম্পট দেন। হাসপাতালে দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান হান্নান। ওই যাত্রায় বেঁচে যান তার স্ত্রী। একই বছরে তিন মাসের ব্যবধানে রাজশাহীতে আরও তিনটি বাসায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সব বাসায় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে অজ্ঞান করে জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি।
তিনটি ঘটনায় রাজশাহীতে পৃথক তিনটি মামলা হলেও পুলিশ ‘শান্তি’ নামে ওই গৃহকর্মীকে খুঁজে পাচ্ছিল না। গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া লুটের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এই ভয়ংকর চক্রের পূর্বে কৃত অপকর্মের সন্ধান পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ । আরো জানা যায়, গৃহকর্মী পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর এলাকায় বাসাবাড়িতে ঢুকে খাবারের সঙ্গে ক্লোরনসহ অন্যান্য চেতনানাশক মিশিয়ে স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয় এই সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের মূল হোতা ‘শান্তি’ পরিচয়দানকারী এই গৃহকর্মী।
তদন্তে আরো বেরিয়ে আসে, দেশব্যাপী তার এই চক্রে আরও তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন বিউটির স্বামী খোরশেদ আলম ওরফে মোরশেদ, বিউটির প্রতিবেশী রিপনা বেগম ও তার স্বামী ফারুক আহমেদ।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে শান্তি জানান, ওই দিনই জুরাইনের একটি বাসায় একই ধরনের ঘটনার পরিকল্পনা রয়েছে তার সহযোগী রিপনার। ওই বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে ১৪ মার্চ দুপুরেই সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। কাকতালীয়ভাবে পুলিশ জুরাইনে ওই বাসার অদূরে গলি থেকেই গ্রেফতার করে রিপনাকে।
যেভাবে বেরিয়ে এলো রাজশাহীর কাহিনিঃ গৃহকর্মী বেশে অজ্ঞান পার্টির এই চক্রকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ছবি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিউজপোর্টাল ও ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়। সেখানে বিউটির ছবি দেখে রাজশাহী থেকে একজন ভুক্তভোগী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান- ছবিতে বিউটি নামে যিনি রয়েছেন, তিনি ২০১৬ সালে তাদের বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে পালিয়েছিলেন। তাদের কাছে ওই গৃহকর্মীর ছবি থাকলেও দীর্ঘ দিনেও তার খোঁজ দিতে পারছিল না পুলিশ। রাজশাহী থেকে ওই ক্লু পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিউটিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তিনি স্বীকার করেন- শুধু রাজশাহী নয়, দেশের আরও অনেক এলাকায় একইভাবে বাসার বাসিন্দাদের অজ্ঞান করে লাখ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিস হাতিয়েছেন তারা।
ডিএমপি নিউজে ১৫ মার্চ গৃহকর্মী শান্তি ও তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের খবরটি ‘সফট টার্গেট’ বেছে নিয়ে বাসায় চুরি করতেন তারা এই শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছিল।