ডিএমপি নিউজ: রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ সুরুজ্জামান আকন্দ। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার গায়রা গ্রামে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার ওবাইন ডিএমপি নিউজকে জানান, আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটায় গুলিস্তান উৎসব বাস কাউন্টারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো জানান, সুরুজ্জামান আকন্দ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সরকারি রেশন বিক্রির কাজ করতেন। পাকিস্তান সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি এই কাজটি পান। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার নিজের এলাকায় পাকিস্তানিদের সহচর বা রাজাকার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মোঃ সুরুজ্জামান আকন্দের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২২ সালে তার নামে মামলা রুজু হয়। তার নামে সুনির্দিষ্ট চারটি অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার ওবাইন জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযোগ রয়েছে প্রথমত- ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট ফুলপুর থানার রামনাথপুর বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি পতাকার স্থলে বাংলাদেশী পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ ঘটনায় সুরুজ্জামান আকন্দ পাকিস্তানি হানাদারদের খবর দিলে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। দ্বিতীয়ত ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট সুরুজ্জামান আকন্দের নেতৃত্বে ফুলপুরের মিস্কিপাড়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬ সদস্যকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানানো হয়। তৃতীয়ত সুরুজ্জামান আকন্দের নেতৃত্বে ফুলপুর উপজেলার ঝাউখালি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলিকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে তার লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। চতুর্থত জাঠিয়া গ্রামের সুফিয়া খাতুন নামের এক নারীকে বাসা থেকে অপহরণ করে শেরপুর জেলার নারায়ণখোলা হাইস্কুলে ৪ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ ও হত্যা করে।
তিনি জানান, অভিযোগ গ্রহণের পর থেকেই ফেরারি হন সুরুজ্জামান আকন্দ। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি সকল প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করে দেন। তিনি মসজিদে মসজিদে চিল্লায় থাকতেন। ২০১৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত তিনি ৩০টিরও বেশি চিল্লায় অংশগ্রহণ করেছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এই আসামীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।