বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি পাহাড় বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা নীলগিরি পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২২০০ ফুট। পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া অবধি সবুজের চাদরে মোড়া। শীতে কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকা চারপাশ, এ যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ। উঁচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ পদ্ধতিতে জাম্বুরা, পেঁপে, জলপাই, আম, কাঁঠাল, কমলালেবু, কলা, আনারস ও পেয়ারার বন সাজিয়েছেন পাহাড়িরা।
প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান, কিভাবে যাবেনঃ
নীলগিরি যেতে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে প্রথমেই বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে বান্দরবান যেতে পারেন। বাসে যেতে চাইলে এক্ষেত্রে নন এসির ভাড়া ৫০০-৫৫০ এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১৬০০ টাকা করে। বাসে করে গেলে বান্দরবান পৌঁছাতে ৭-১০ ঘন্টা লাগবে।
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যেতে কোন ট্রেন নেই। ঢাকা থেকে প্রথমে ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে শ্রেনীভেদে ৩০০-১২০০ টাকা করে।
চট্রগ্রাম নেমে বদ্দরহাট নামক স্থান থেকে বাসে করে বান্দরবান যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ২০০-২২০ করে। এছাড়াও চট্রগ্রামের দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ার মধ্যেও বাসে করে সরাসরি যেতে পারেন বান্দরবান।
বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাবেন যেভাবেঃ
বান্দরবন থেকে নীলগিরি যেতে অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। জীপ, মহেন্দ্র, সিএনজি, লোকাল বাস অথবা চান্দের গাড়ি দিয়ে যেতে পারেন নীলগিরি। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নিলে। এতে নীলগিরি যাওয়ার পথের অন্যান্য জায়গায়ও ঘুরে দেখতে পারবেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে জীপ নিয়ে নিতে পারেন। এইসব জীপ আপনি বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩০০০-৬০০০ টাকা ভাড়ায় নিতে পারবেন। এছাড়াও চান্দের গাড়ি, সিএনজি, ছোট জীপ ইত্যাদি দিয়েও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা না থাকলে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। তবে নীলগিরিতে মেঘের মেলায় হারিয়ে যেতে চাইলে খুব সকালে চলে যাবেন যেন ৫-৬ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারেন।
কম খরচে যেতে চাইলে আপনি লোকাল বাসে করেও যেতে পারেন, তবে এতে সময় অনেক বেশি লাগবে। থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে থানচির উদ্দেশ্যে বাস কিছুক্ষণ পর পরই ছাড়ে। এক্ষেত্রে ভাড়া হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে গেলে লোকাল বাসে করে না যাওয়াই ভালো।
নীলগিরি যাওয়ার নিয়মাবলীঃ
নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোস্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। এটি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়। সাধারণত বিকেল ৫টার পর থেকে নীলগিরির পথে আর কোন গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাই সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের টিকিট মূল্যঃ
নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্রে যেতে জনপ্রতি টিকিট মূল্য বাবদ রাখা হয় ৫০ টাকা এবং গাড়ির জন্য রাখা হয় পার্কিং বাবদ ৩০০-৪০০ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ
বেশিরভাগ পর্যটকরাই বান্দরবান থেকে নীলগিরি ঘুরে দিনে দিনেই আবার বান্দরবান ফিরে আসেন। বান্দরবানে বেশকিছু আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। শহর ও তার আশেপাশেই এইসব রিসোর্ট এবং হোটেলগুলো রয়েছে।
এছাড়াও যারা নীলগিরিতে থেকে মেঘের আনাগোনা উপভোগ করতে চান তাদের জন্য রয়েছে কটেজ। এ কটেজ সবার কাছেই খুবই আকর্ষনীয় তাই মাসখানিক আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এই কটেজের বিভিন্ন রুমের ভাড়া পরবে ৫০০০-১০০০০ টাকা। মনে রাখবেন সময়ের উপরও ভাড়া নির্ভর করে। ছুটির দিনগুলোতে ভাড়া বেশি হয়ে থাকে। এসময় ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে দিবেন। কিন্তু অফ সিজনে গেলে ৩০-৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।
কোথায় খাবেনঃ
নীলগিরি রিসোর্টে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে এইসব রেস্টুরেন্টেও খেতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে আগে থেকে খাবার অর্ডার করে রাখতে হবে। এছাড়াও বান্দরবান ফিরে এসেও খেতে পারেন। বান্দরবানে বেশকিছু খাবারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে।
নীলগিরি যাওয়ার পথে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানঃ
নীলগিরি যাওয়ার পথে আরও অনেকগুলো আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। নীলগিরি যেতে শৈল প্রপাত ঝর্ণা, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র ও সাইরু হিল রিসোর্ট পার হয়ে যেতে হয়। আপনি রিজার্ভ গাড়ি না নিলে এইসব স্পটগুলো ঘুরে যেতে পারেন। অথবা গাড়ি ঠিক করার সময় আগে থেকেই বলে নিবেন। খুব ভালো হয় যদি আগে সরাসরি নীলগিরি চলে যান। মেঘের কোলে ঘুরে আসার পথে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। আর যদি বিকেলে নীলগিরিতে সময় কাটাতে চান তাহলে যাওয়ার পথেই সব আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে তারপর নীলগিরি যেতে পারেন।
কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
বান্দরবান থেকে নীলগিরি খুবই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ভ্রমণ করার সময় সাবধান থাকুন। চান্দের গাড়িতে উঠার সময় ছাঁদে উঠবেন না। ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে করে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখবেন। শৈল প্রপাত ঝর্ণার পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, নামার সময় সাবধানে থাকবেন। শৈল প্রপাত বা চিম্বুকে আদিবাসীদের তৈরি জিনিসপত্র কম দামে কিনতে পারেন। আদিবাসীদের অসম্মান হয় এমন কিছু করবেন না। কম খরচে নীলগিরি ঘুরতে চাইলে দলবেঁধে যান।