লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো সংবাদমাধ্যম ‘লয়েডস লিস্ট’ এর ২০১৬ সালের জরিপে (২০১৭ সালে প্রকাশিত) বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পাঁচ ধাপ এগিয়ে ৭১ তম অবস্থানে উন্নিত হয়েছে। ২০১৫ সালের জরিপে (২০১৬ সালে প্রকাশিত) বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম।
২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৯৮ তম। বিগত ৮ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর তার কর্মদক্ষতা এবং সর্বোচ্চ হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২৭ ধাপ এগিয়ে এ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রনি ভূমিকা রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এ অভূতপূর্ব সাফল্য বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রতিফলন। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এর সফল বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সাফল্যকে বিশেষভাবে করে। এ সময় লয়েডস লিস্ট-এর সম্পাদক লিন্টন নাইটএংগেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট সনদপত্র হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবদুস সামাদ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৯; ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ৬ হাজার ৪৫৬; ২০১৪ সালে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৫১৭; ২০১৬ সালে ২০ হাজার ২৪ হাজার ২০৭ এবং ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪৬ হাজার ৯০৯ টিইইউস (২০ ফিট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনার) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে।
২০০৯ সালে ২ হাজার ৯৯; ২০১৩ সালে ২ হাজার ১৫৬; ২০১৪ সালে ২ হাজার ৪১০; ২০১৬ সালে ২ হাজার ৭০৯ এবং ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৪ টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৭৭টি কনেন্টইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। ১১টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, পাঁচটি কন্টেইনার মুভার, ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি রীচ স্ট্যাকার এবং একটি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন্দরে যাতায়াতকারী ট্রাক/ট্রেইলার স্কেনিং করার জন্য ‘টু স্টেজ গেইট’ স্থাপন করা হয়েছে।
ডিজিটাল পদ্ধতি কন্টেইনার ট্র্যাকিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) চালু করা হয়েছে। দু’টি বিশেষায়িত জাহাজ ‘ওয়েলি ওয়েস্ট ক্লিনার ভেসেল’ এবং ‘সলিড ওয়েস্ট ক্লিনার ভেসেল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ‘ভেসেল ট্র্যাকিং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। কন্টেইনার স্কেনিং করার জন্য ‘মোবাইল স্কেনিং ভেহিকেল’ ক্রয় করা হয়েছে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (৪৫০০ মে.টন) ‘টাগ বোট’ নির্মাণ করা হয়েছে। ‘কার শেড’ চালু করা হয়েছে। দু’টি ‘কার ক্যারিয়ার’ ক্রয় করা হয়েছে। একটি ‘মাল্টিপারপাস ড্রেজার’ ক্রয় করা হয়েছে। এবং ‘সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ড’ চালু করা হয়েছে।
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ‘বে কন্টেইনার ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল’; মাতারবাড়ি মাল্টিপারপাস পোর্ট; লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল; কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল; মিরেরসরাই জেটি নির্মাণ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
শীর্ষ ১০০টি বন্দর ২০১৬ সালে ৫৫৫ দশমিক ছয় মিলিয়ন টিইইউস (টুয়েন্টি ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে।
২০১৫ সালের চেয়ে যা দুই দশমিক দুই ভাগ বেশি। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন ও সিঙ্গাপুর। চীনের ২০টি, ভারতের তিনটি ও পাকিস্তানের করাচী বন্দর স্থান পেয়েছে তালিকায়।
করাচি বন্দরের অবস্থান ৭৭তম আর বাংলাদেশের অবস্থান ৭১তম। বিশ্বের চার হাজার বন্দরের মধ্যে ৫০০টি বন্দর নিয়মিত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে থাকে।