চীনে পড়তে গিয়ে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধপন্থায় টাকা আয়ে জড়িয়ে ধরা পড়েছেন বাংলাদেশি একাধিক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি একটি চক্রের সন্ধানের পর অধিকর তদন্তের পর চক্রের আরও সদস্য ধরা পড়েছে পুলিশের জালে।
তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ৩০টি ভারতীয় সিমসহ গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন– রাকিবুল ইসলাম রাতুল (২৪), আসাদুজ্জামান রাজু (২৯) ও মামুন হাওলাদার (২৭)।
ডিবির দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১২ হাজার চাইনিজ নাগরিক অবস্থান করছেন। তাদের অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। দেশজুড়ে অবস্থান করা চাইনিজরা পেতেছেন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে পড়তে গিয়ে হয়ে যাচ্ছেন এই প্রতারক চক্রের মূল অস্ত্র। বিভিন্ন অ্যাপস খুলে, জুয়ার সাইট চালিয়ে এবং অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চাইনিজরা।
ডিবি জানায়, গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানায় এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। তারই তদন্ত করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ। তার নেতৃত্বে একটি দল ঢাকার বিমানবন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।
ওই প্রতারকরা আমাজনডটকম, দারাজডটকম, ফিল্পকার্টডটকম ও পিকাবোডটকমের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালিয়ে গ্রাহকদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। চক্রের দুই চাইনিজ নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই মামলার অধিকতর তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ অংশ চীনে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যায়। তাদের একটা বড় অংশ চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য তারা চাইনিজদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের মূলহোতা চাইনিজরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাইনিজ প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। তারা ভালো বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। তখন তারা চীনে পড়তে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দিয়ে তারা প্রতারণার কাজটি করছে। অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাইনিজরা। কারণ প্রত্যেকটি প্রতারণার সাইটের অ্যাডমিন চীনে।
এসবের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে দুই চাইনিজ গাগা ও চিং চং। তারা প্রতারণার জন্য চীনে একটা সার্ভার স্থাপন করেছে। সেখান থেকে চিং চং বিকাশ, নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে। এরপর ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রতারণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে হারুন বলেন, রাতুল, রাজু, মামুন অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং, অনলাইন ফিন্যান্সিং, বেটিং সাইট, সি-ফাইন্যান্স, লোন অ্যাপস, হানিট্রাপেও সরাসরি জড়িত। গ্রেপ্তাররা চাইনিজ প্রতারক চক্রের হয়ে বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এ চক্রে দেশি-বিদেশি আরও নানা লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে।
চক্রটি মানুষকে অনলাইনে টাকা উপার্জনের কিংবা পার্টটাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে থাকে। আর এসবের মূল পরিকল্পনাকারী গাগা ও চিং চং নামক দুই চাইনিজ বলেও জানান হারুন অর রশীদ। তথ্যসূত্রঃ সময়।