টালমাটাল এক বিশ্ব পরিস্থিতিতে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, দেশে দেশে সন্ত্রাসীদের একের পর এক হামলায় যখন উত্তাল চারদিক তখন এই অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী।
জাতিসংঘের সামনে বৈশ্বিক উষ্ণতা, সন্ত্রাস মোকাবিলাও বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে দেশের নেতা হিসেবে প্রথমবার পা রাখবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ফ্রান্সের তরুণ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন। এর বাইরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের শতাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এর মধ্যে রয়েছেন আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। তার সঙ্গে রয়েছেন ৭০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
ধারণা করা হচ্ছে, অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে বক্তব্য রাখবেন বা বৈঠকগুলোতে উপস্থিত থাকবেন তাতে অগ্রাধিকার পাবে উত্তর কোরিয়া ইস্যু। এই উত্তর কোরিয়াকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক সঙ্কট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাই ট্রাম্প তার পর্যাবেক্ষণে বা বক্তব্যে কি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কাছে কি বার্তা দেন সেদিকে নজর থাকবে সবার। এটাই বেশির ভাগ নেতার এক নম্বর ইস্যু হতে পারে।
তবে বিশ্ব নেতারা যে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবেন না তাহলো মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যু। তাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার জাতি নির্মূলের অভিযান চালাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। ওদিকে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে অং সান সুচির। এটাকে তার জন্য শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন গুতেরাঁ। তিনি বলেছেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যদি সহিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ না নেন তাহলে তাকে করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন গুতেরাঁ।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতায় এরই মধ্যে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে দেশ ছেড়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ নৃশংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই সহিংতার নিন্দা জানিয়ে এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গত ৯ বছরের মতো প্রথম বিবৃতি দিয়েছে। সোমবার এ সঙ্কট নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আহ্বান করেছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। মঙ্গলবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)র। গুতেরাঁ বলেছেন, তৃতীয় যে বিষয়টিতে নেতারা দৃষ্টি দিতে পারেন তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, সিয়েরা লিংন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় এবার। এই প্রাকৃতি দুযোর্গের বিষয়টি সামনে আসতে হবে।