বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের নয়টি দেশের কবিদের মানবিক-মর্মন্তুদের কবিতা নিয়ে ঢাকায় শুরু হতে ‘জাতীয় কবিতা উৎসব-২০১৮’। ‘দেশহারা মানুষের সংগ্রামে কবিতা’স্লোগানে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে শুরু হবে দুই দিনব্যাপী এই কবিতা উৎসব। ৩২তম বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এই উৎসবটি চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ বছর কবিতা উৎসবের থিম সং লিখেছেন কবি মহাদেব সাহা।
এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় কবিতা পরিষদ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় উৎসব দফতরে অনুষ্ঠিত হয় এই সংবাদ সম্মেলন। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। বক্তব্য রাখেন-কবি আসলাম সানী, কবি আমীরুল ইসলাম, কবি আসাদ মান্নান, কবি নাহার ফরিদ খান। সঞ্চালনায় ছিলেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি আমিনুর রহমান সুলতান।
এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই লিখিত বক্তব্যে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে জানান, এবারের কবিতা উৎসবে সুইডেন থেকে কবি আরনে জনসন, ক্রিস্টিয়ান কার্লসন, ভিভেকা জোরেন, ইংল্যান্ড থেকে এগনেস মেডাওস, ক্যামেরুনের কবি জয়সে আওসাতাতাং, মিশরের কবি ইব্রাহীম এলমাসরি, মেক্সিকোর ইউরি জার্মানো, জাপানের টেন্ডু তেইজিন, তাইওয়ানের মিয়াও-ওয়াইতুম, কলম্বিয়ার মারিও মেথর অংশ নেবেন। এছাড়া ভারত থেকে বিভিন্ন ভাষার কবিরা অংশ নেবেন। তিনি বলেন, এবারের এ উৎসবে সবমিলিয়ে ৩০০ কবি তাদের কবিতা পাঠ করবেন। কবিতা পাঠ ছাড়াও কবিতা নিয়ে বিভিন্ন সেশনেও অংশ নেবেন তারা।
কবি তারিক সুজাত জানান, এবারের কবিতা উৎসবে মূল প্রতিপাদ্য হয়ে দাঁড়াবে মিয়ানমারের জাতিগত সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তিনি বলেন, দেশহারা মানুষের অনিশ্চিতের যাত্রা এখনো অব্যাহত। আসন্ন জাতীয় কবিতা উৎসবে দেশ ও বিদেশের শুভবাদী কবিরা দেশহারা মানুষের সংগ্রামে কবিতার অমল শক্তি নিয়ে সাহস যোগাবে।
উগ্রবাদীদের পশ্চাৎপদ অন্ধ বিশ্বাসের কাছে সঞ্চিত শুভ বোধের পরাজয় আর শান্তিকামী মানুষের সঙ্কটে কবিরাও ‘আতঙ্কিত’ বলেও জানান তারিক সুজাত। এবং তিনি আরও বলেন, এবারের কবিতা উৎসবে বর্বরতার বিরুদ্ধে কবিতার শাণিত উচ্চারণে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে।
কবি মুহাম্মদ সামাদ জানান, এবারের কবিতা উৎসবে ঘোষণা আসবে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারের। উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতি এক বছর অন্তর কবিতা পরিষদ একজন কবিকে এই পুরস্কারটি প্রদান করে। ২০১৬ সালে এই পুরস্কার পান প্রয়াত কবি সাযযাদ কাদির।
এদিকে, এ কবিতা উৎসবে যারা কবিতা পাঠে আগ্রহী তাদের জন্য শুরু হয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ২য় তলায় উৎসব দফতরে এই নিবন্ধন চলছে। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কবিদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা উৎসবের শুরু। স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, গণতন্ত্র হনন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বর্বরতার বিরুদ্ধে এই কবিতা উৎসবে প্রতিবাদ জানান বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কবিরা।