ডিএমপি নিউজ: একটি চোরাই মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে দুই বছর আগের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ। গাড়ি চোর চক্রের ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়া চা পান করে মারা যায় গিয়াস উদ্দিন। তার এক হত্যাকারী কুখ্যাত গাড়ি চোর মো: রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মো: রফিকুল ইসলামকে তুরাগ থানার বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। সে একজন পেশাদার গাড়ি চোর চক্রের সদস্য। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি প্রাইভেটকার, পাঁচটি মোটরসাইকেল এবং হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আলামত ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
রাজধানীর চকবাজার থানার একটি চুরি মামলা তদন্তে বেড়িয়ে এলো গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। পরিবার ধরে নিয়েছিল অজ্ঞাত ফুড পয়জনিং এর কারণে তার মৃত্য হয়। যার কারণে তার পরিবার তখন কোন মামলা করেনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত গিয়াস উদ্দিন মিরপুরের বাসা থেকে আসা-যাওয়ার পথে রাইড শেয়ারিং চালাতেন। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিকাল ৩টায় অফিস থেকে বের হয়ে তিনি আর বাসায় ফিরেননি। রাত ১১টায় উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে মর্মে তার পরিবার জানতে পারে। সেখান থেকে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৮ ডিসেম্বর মারা যান। ডাক্তারদের মতে তার মৃত্যুর কারণ ছিল অজ্ঞাত ফুড পয়জনিং। তার মোটরসাইকেল বা মোবাইল ফোন সেসময় পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ডিবি-লালবাগ বিভাগ গত ১০ ফেব্রুয়ারি চকবাজার থানার একটি গাড়ি চুরি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য মোঃ রানা শেখকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে মোট ৯টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলগুলোর মালিকানা যাচাই ও তা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি মোটরসাইকেলের মালিক জনৈক গিয়াস উদ্দিন। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায় তিনি দুই বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মারা যাওয়ার ধরণ ও মোটরসাইকেল চোরদের অপরাধের ধরণে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে, তদন্ত পায় নতুন মোড়। রানা শেখকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের মালিক গিয়াস উদ্দিন ২০২১ সালে ২৮ নভেম্বরে হত্যা করা হয়েছিল। রানা শেখ গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলামের সাথে মিলে কীভাবে ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করে মোটরসাইকেল এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় সে বর্ণনা গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়। উঠে আসে সেদিন কীভাবে গিয়াস উদ্দিনকে চায়ের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায়। রানা শেখ জানায়, গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম পাঠাও চালক গিয়াস উদ্দিনকে উত্তরার নিয়ে যাওয়ার পথে কৌশলে সখ্যতা তৈরি করে চা খাওয়ায়। সেই চায়ের মধ্যে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়ার কারণে মোটরসাইকেল চালক অচেতন হয়ে পরে। সেই ফাঁকে মোটরসাইকেল গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম ভিকটিমের মোবাইলফোন, কিছু নগদ টাকা এবং মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের মোটরসাইকেলসহ আরো কয়েকটি চোরাই মোটরসাইকেল মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়। আদালতে রানা শেখ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত রফিকের নামে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরির ৪২টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় সে গ্রেফতার হলেও আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
যারা রাইড শেয়ার করেন তাদেরকে যাত্রীদের সাথে অতিরিক্ত সখ্যতায় জড়িয়ে চা, কফি, ডাব বা অন্যকিছু না খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।