ডিএমপি নিউজ: প্রখর রোদে রাজধানীতে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যেই সেবা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সাড়ে তিন হাজার সদস্য। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘামে তাদের জামা ভিজে যাচ্ছে। এক হাতে ছাতা ধরে অন্য হাতে গাড়ি চলাচলের ইশারা-ইঙ্গিত করছেন তারা।
ফকিরাপুল মোড়ে রোববার প্রখর রোদে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ প্রমানন্দ ধরের সঙ্গে কথা হলো। তপ্ত রোদে শরীরের ঘামে তাঁর জামাও ভিজে গেছে। কপালের ঘাম গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। তপ্ত পিচঢালা রাস্তায় ঘাম বাষ্পে পরিণত হচ্ছে।
প্রমানন্দ সমকালকে বলেন, রাস্তার প্রখর তাপে পুড়ছি, গরম তো প্রতিবছর আসে। কিন্তু এমন তপ্ত পরিস্থিতি এই প্রথম। রোদের তাপে রাস্তার পিচও গলে যাচ্ছে। একদিকে রোদের তাপে উত্তপ্ত রাস্তা ও অন্যদিকে গাড়ির ধোঁয়া। রাস্তায় যেন আগুন ঝরছে। এর সঙ্গে আছে হর্ন ও হুটারের শব্দের যন্ত্রণা।
রোদে পুড়ে কারওয়ান বাজার মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন খোকন চন্দ্র দেব নাথ। কথা হলো ট্রাফিক সদস্য হাবিবুর রহমান ও মইনুলের সঙ্গেও। তারা মনে করেন, ঢাকা শহরে যানজট নিরসন করতে হলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করার পাশাপাশি রিকশা তুলে দিতে হবে।
জানা গেল, দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা হিট স্ট্রোকসহ পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। কেউ কেউ ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।
মতিঝিল বিভাগে ৪৬৯ জন ট্রাফিক সদস্য রয়েছেন। ইতোমধ্যে ৪ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনজন হাসপাতালে ভর্তি ও একজন মেডিকেল বিশ্রামে রয়েছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, এই তাপমাত্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা রোদে থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিট স্ট্রোক। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেলে চেহারা লাল বর্ণ হয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে একটু পরপর পানি ও স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সরেজমিন রোববার রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার ফার্মগেট, মালিবাগ ও রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের তপ্ত রোদে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে পানির গাড়ি রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য পানি পান করছেন।
এদিকে খরতাপ উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্যের পেশাদারিত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। প্রচণ্ড তাপদাহে কর্মরত সদস্যদের স্বস্তি দিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক সদস্যদের জন্য সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত ও গ্লুকোজ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাফিক বক্সে হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ও সুস্থ থাকতে বারবার ব্রিফিং করা হচ্ছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে অতিরিক্ত কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত মোট সদস্য রয়েছে ৩ হাজার ৮৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ সদস্য সরাসরি মাঠে কাজ করেন। প্রথম শিফট সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর আড়াইটা। দ্বিতীয় শিফট দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ১১টা। রাতের শিফট ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহের মধ্যেও ট্রাফিক সদস্যদের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তপ্ত আবহাওয়া যতদিন চলবে, প্রতিদিনই ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে খাবার পানি ও স্যালাইন সরবরাহ করা হবে।
বগুড়া থেকে আবদুল আউয়াল জানান, ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। চলমান তাপদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শহরের সাতমাথা ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশ বক্স না থাকায় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন তারা। বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ নেই।
গত ১৮ এপ্রিল শহরের ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ডিহাইড্রেশনে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মশিউর রহমান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, সদস্যরা তীব্র তাপদাহের মধ্যেও দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। সূত্র: সমকাল