সাইক্লোন ইদাইয়ের কবলে দক্ষিন-পূর্ব আফ্রিকায় শত শত মানুষকে নিহত হয়েছে। তীব্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশও। বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক জনপদকে ধ্বংস করেছে। সাম্প্রতিক কালে এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে বৃটেনেও। গত মাসেও স্যাডেলওররথ মুরে বনে দাবানল দেখেছে মানুষ। সেসময় বাতাস এত বেশি দূষিত হয়েছিল যে মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব পৃথিবীর সকল দেশ সমভাবে অনুভব করে না। এটি নির্ভর করে আপনি কোথায় বাস করছেন, আপনি কত ধনী ও কিভাবে নিজেকে এ থেকে রক্ষা করতে পারছেন তার ওপর। একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সকল রাষ্ট্রই সমান দায়ী নয়।
কিন্তু গত কয়েক বছরে আমাদেরকে একটা মিথ্যা বলা হয়েছে যে এর জন্য সাধারণ মানুষরাই দায়ী, ব্যাংকার বা ধনী তেল কোম্পানিগুলো নয়। ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের তেল কর ঘোষণার পর দেশটিতে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন শুরু হয়। এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে দেশের গরীব মানুষদের, তেল কোম্পানির নয়।
কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে আমরা যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত নানা সংকটে ভুগছি তার একমাত্র কারণ আমাদের অর্থনৈতিক সিস্টেম। পুঁজিবাদী এই সিস্টেম শুধু গুটি কয়েক মানুষের জন্য কাজ করে, সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য নয়। পুঁজিবাদের কারণে ধনী আরো ধনী হচ্ছে আর তাদের লোভে বাস্ততন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালের পর থেকে পৃথিবীতে যত কার্বন নিঃসরিত হয়েছে তার ৭০ শতাংশের জন্যই মাত্র ১০০টি কোম্পানি দায়ী। এই তেল কোম্পানিগুলো গ্রহটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই ক্ষতির জন্য যদি ক্ষতিপূরন দিতে হয় তবে তাদেরকেই সেটা দিতে হবে।
কিন্তু শুধু তেল কোম্পানিগুলোই নয় এর জন্য দায়ী ব্যাংকগুলোও। ব্যাংকগুলো তেল কোম্পানিগুলোর পেছনে অর্থায়ন করে আসছে। এক দশক আগে তারা পৃথিবীর অর্থনীতি ধসিয়ে দিয়েছিল এখন তারা পৃথিবীটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে বারক্লেস ব্যাংক শুধু জ্বালানি শিল্পেই ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখন আমরা যদি বারক্লেসকে তার মুনাফা অর্জনের পথে বাধা দেই তাহলে তা হবে পুঁজিবাদী এই সিস্টেমের জন্য একটি বাধা। কারণ এই সিস্টেম একজনকে উৎসাহিত করে যে কোনো মূল্যে মুনাফা অর্জনের জন্য, তাতে পৃথিবী ধ্বংস হলেও কিছু যায় আসে না।
আর এ জন্যেই বিশ্বজুড়ে নতুন একটি প্রচারণা শুরু হচ্ছে যার একটিই দাবি বারক্লেসকে জ্বালানী শিল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য তাদের ওপর যথেষ্ট রাজনৈতিক চাপ নিশ্চিতের চেষ্টাও চলছে। সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ আন্দোলনকারীরা তাদের দেশের ব্যাংকগুলোকে কয়লা খাতে বিনিয়োগ বন্ধে বাধ্য করেছে। এটিই এখন বারক্লেস বিরোধী প্রচারনার উনুপ্রেরনা।
সাধারন মানুষ আর গুটি কয়েক পুঁজিপতিদের অপরাধের দায় কাধে নেবে না। উল্টো আজ তারা ওই তেল কোম্পানি ও করপোরেট এলিটদের দিকেই আঙ্গুল তুলছে ও ভাল কিছু আশা করছে।