প্রথমবারের মতো বন্ড ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল)। আজ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সকালে রাজধানীর ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ (সাবেক রূপসী বাংলা) হোটেলে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রথম পর্যায়ে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বন্ডের মাধ্যমে নেয়া হবে ৩৮৫ কোটি টাকা। সাত বছর মেয়াদি প্রতিটি ৫ হাজার টাকা অভিহিত মূল্যের এই বন্ডের কুপন হার হবে সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ ১শ কোটি টাকা করে নেয়া হবে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে। বন্ডের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ৬শ কোটি টাকা যোগাড় করতে চায় আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি। এর মধ্যে ৫শ কোটি টাকা নেয়া হবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে। বাকিটা আসবে পাবলিক প্লেসমেন্ট থেকে। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল এই টাকা সংগ্রহের জন্য অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের বন্ডবাজারকে শক্তিশালী করতে এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে। এই টাকা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন, এপিএসসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এএমএম সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বন্ডের মাধ্যমে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট আরও গতিশীল হবে। ২০০৯ সালে যে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছিল তারই হাত ধরে আজকের এই সাফল্য। বিদ্যুৎ মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এজন্য বিদ্যুতের প্রসার করে যেতেই হবে। আমাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। চাহিদার কারণে লক্ষ্য পুরণ হয়ে যাবে। আবার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ মিরাকল কান্ট্রি।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, এক সময় ভারতের পার ক্যাপিটা ইনকাম আর বিদ্যুতের উন্নয়ন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে আমরা যত এগিয়েছি তারা ততটা এগুতে পারেনি। কারণ আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধাননমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আমাদের আজকের এই অবস্থান। আগামীতেও তার নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে চাই।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে মিলিয়ে মন্ত্রণালয় কীভাবে কাজ করতে পারে সে কাজ দেখিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সারা বিশ্ব বসে আছে আমাদের টাকা দিতে। আমাদের শুধু আরও স্বচ্ছ, আরও গতিময় হতে হবে। দেশের কোনায় কোনায় আজ আলো।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে অর্থায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। সরকারিভাবে এই উদ্যোগ বিদ্যুৎখাতকে আরও এগিয়ে নেবে। যার নেতৃতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীতেও তার নেতৃতে এগিয়ে না গেলে বিদ্যুৎখাতের এই অগ্রগতি থেমে যেতে পারে।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আগামীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন । সে বিনিয়োগের জন্য এ ধরনের চুক্তির প্রয়োজন। এই যাত্রা আমরা শুরু করলাম। একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এই ধরনের বিনিয়োগ আরো প্রয়োজন হবে।
এপিএসসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এএমএম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সমূহকে সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এই উদ্যোগ। ২০২৫ সালের মধ্যে ২৮ হাজার ২৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি। যা মোট চাহিদার ১২ শতাংশ। এই উৎপাদন বাড়াতে আরো একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে কোম্পানিটি। যে জন্য আগামী ৪ বছরে বিনিয়োগের দরকার হবে ছয় হাজার কোটি টাকার মতো। এই টাকার কিছু অংশ যোগাড় করতে প্রথমবারের মতো বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে এপিএসসিএল। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গতি আসবে বিদ্যুৎ খাতের বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থায়। গেলো দশ বছরে বিদ্যুৎ খাতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮বিলিয়ন ডলার। অনুষ্ঠানের শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বন্ড ক্রয়ের চুক্তি ( সাবসক্রিপসন এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর করেন এপিএসসিএল এমডি এএমএম সাজ্জাদুর রহমান।