নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য সালেহা বেগম বলছেন, গত পনের বছরে চাষাবাদের দিক থেকে পাল্টে গেছে তাদের এলাকা। আগে চারদিকে শুধু ধানক্ষেত দেখা যেতো। ২০০২ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে সব আমবাগান হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরা আগে রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুঁজতাম। এখন নওগাঁর আম কিনতে বহু মানুষ আসে আমাদের এলাকায়।
সালেহা বেগমের মতে, আমের মৌসুমে জমজমাট হয়ে উঠছে নওগাঁ কারণ ঢাকাসহ নানা জায়গা থেকে স্থানীয় বাজার ও আড়তে লোকজন আসে আম কেনার জন্য। ধানের চেয়ে বেশি লাভ আম চাষে। তার কথার সাথে একমত সাপাহার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস সরকার।
এক মন ধানের দাম উঠে ৬/৭শ টাকা । সেখানে আম হাজারের নীচে নাই। মৌসুমে চার হাজার টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে। তাই সবাই এখন আমের দিকেই ঝুঁকছে। তার এলাকায় কম বেশি সব জায়গায় এখন আমের বাগান গড়ে উঠেছে। বাইরের মানুষ এসেও আম বাগান কিনে নিচ্ছে আর ফলনও হচ্ছে ব্যাপক।
কেন নওগাঁয় বাড়ছে আম বাগান?
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলছেন জেলার সবজায়গাতেই আম চাষ বাড়ছে যদিও পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় বেশি আম বাগান দেখা যাচ্ছে। এটি বরেন্দ্র এলাকা। এ এলাকায় পানির পরিমাণ কম আবার সেচ সুবিধাও নেই। তাই মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণেই প্রচুর ফলন হয় আমের। জেলায় এখন বছর জুড়েই আমের চারা বিক্রি হয়।
তবে এখানে ফলনের পরিমাণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে কম হয় বলেই জানান তিনি। নওগাঁয় নতুন নতুন বাগান হচ্ছে এবং ফলন বাড়ছে এটি সত্যি। কিন্তু মনে রাখতে হবে চাপাইতে একটি বড় গাছে যে পরিমাণ আম হয় নওগাঁয় একই ধরণের বড় গাছে সেই পরিমাণ আম হয়না। তবে নতুন মাটি ও নতুন নতুন গাছ হওয়ার কারণে দিন দিন ফলন বাড়ছে। তাছাড়া নওগাঁর গাছের আকার ছোটো।
অবশ্য তিনি বলেন যে গত কয়েকবছরে আম উৎপাদন এতো বেড়েছে যে অনেক আমের বাজার গড়ে উঠেছে এবং উপজেলা পর্যায়ে আড়তগুলো এখন জমজমাট। এখন নওগাঁর আম চাপাইতে নিয়ে সেখান থেকে অন্যত্র বাজারজাত করেন অনেকে। আবার চাপাই থেকে অনেকে এসে নওগাঁয় বাগান কিনছেন। তাদের অভিজ্ঞতা আছে এবং বিনিয়োগও করছেন।
তাছাড়া আম চাষে নতুন নতুন কৌশলও আসছে বলে জানান তিনি, যা ফলন বাড়াতে ও কোনো ক্ষেত্রে গাছে দীর্ঘদিন আম রেখে মৌসুমের শেষে বেশি দামে বিক্রি করেন অনেকে ব্যবসায়ী।
কোথায় বেশি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাকি নওগাঁয়?
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: শফিকুল ইসলাম বলছেন, দেশে যে পরিমাণ আম উৎপাদন হয় তার ২৫ ভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জে হয়। আম এখন সারাদেশে হচ্ছে। অন্তত তেইশটি জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে আম উৎপাদন হচ্ছে বাগানে। বিশেষ করে নতুন এলাকা গুলোর মধ্যে নওগাঁ, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাঙ্গামাটিতে ভালো আম হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান আছে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আর নওগাঁয় এখন এ ধরণের জমির পরিমাণ প্রায় আঠার হাজার হেক্টর। নওগাঁয় নতুন নতুন বাগান হচ্ছে এবং এক ফসলী জমি বেশি হওয়ার কারণে উঁচু জমিতে আমের বাগান বাড়ছে বলে জানান তিনি। আম রুপালিসহ কয়েকটি জাতের আম নওগাঁয় খুবই ভালো হচ্ছে।
মিস্টার ইসলাম বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে এবং নওগাঁয় হয়েছে পৌনে দুই লাখ মেট্রিক টনের মতো। এটা ঠিক যে এবছর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জেই বেশি আম হচ্ছে। কিন্তু নওগাঁয় দিন দিন বাড়ছে। সেখানে নতুন বাগান হওয়ার কারণে ফলনও বেশি হবে।
“আর অন্তত ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেখানে আম চাষ সম্ভব হবে। ফলে নওগাঁই আসলে দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে”। খবর বিবিসি।