বিপুল পরিমাণ আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে মালয়েশিয়ার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে। তিনি দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের সমন পেয়ে আজ মঙ্গলবার উপস্থিত হয়েছেন দুর্নীতি বিরোধী এজেন্সিতে। সেখানে তার কাছে জানতে চাওয়ার কথা ‘১এমডিসি’ তহবিলের অর্থ কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন ইস্যু। পুত্রজয়া থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৯ই মের নির্বাচনে ভয়াবহভাবে পরাজিত হয় নাজিব রাজাকের জোট। তাকে ঘায়েল করে আবার ক্ষমতার মসনদে বসে পড়েন সংস্কারবাদী জোটের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ৬১ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করে নাজিবের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে নাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিড়ালগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে অন্ধকার থেকে। তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ঘিরে রাখা হয়েছে তার বাসভবন। সেখানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ সহ বিভিন্ন সামগ্রি। তবে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও জটিল যে অভিযোগ তা হলো তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিল ‘১ এমডিবি’ থেকে প্রায় ৭০ কোটি ডলার নিজের ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। এ নিয়ে যখন তদন্ত শুরু হওয়ার কথা ঠিক তার আগে তিনি তদন্ত বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের হয়তো বরখাস্ত করেন না হয় তাদেরকে প্রত্যাহার করেন না হয় তাদেরকে স্থানান্তর করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছিল শুরুতে তা করেছেন তার আজ্ঞাবহরা। এ জন্য ওই তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তাই ক্ষমতা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ও তার বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত স্ত্রী রোজমাহ মানসুর যেন রাতারাতি খ্যাতির শিখর থেকে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। দুর্নীতির তদন্তকারী সংস্থা মালয়েশিয়ান এন্টি-করাপশন কমিশন (এমএসিসি) এ জন্য নাজিব রাজাককে প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজয়ায় তলব করে। তিনি মঙ্গলবার এর কাছে গিয়ে হেঁটে ওই অফিসের ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাকে ঘিরে ছিলেন প্রায় ১০০ সাংবাদিক।
এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বিদ্যুত উৎপাদনকারী কোম্পানিকে ঘিরে তার বক্তব্য কি এ বিষয়ে জানতে নাজিবকে তলব করা হয়েছিল এমএসিসিতে। উল্লেখ্য, এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল ‘১এমডিবি’ এর একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। নাজিবের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তার বিরাট বড় অংশের অন্যতম এটি। ২০১২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে এসআরসি। ওই সময় নাজিব ছিলেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক তদন্ত অনুযায়ী, এসআরসি থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ রিঙ্গিত স্থানান্তর হয়েছে নাজিব রাজাকের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে। ১ এমডিবি তহবিল থেকে প্রায় ৭০ কোটি ডলার স্থানান্তর হয়েছে সেখানে। তবে নাজিব কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছেন।