ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ছোট্ট একটি বিভাগ উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। ছোট্ট একটা বিভাগ কিন্তু বহুমাত্রিক মিশন নিয়ে কাজ করতে হয় এ ডিভিশনের। সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের সহায়তায় তাদের পাশে থাকার জন্য এবং তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে তেজগাঁও থানা সংলগ্ন বাংলাদেশের প্রথম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন করা হয়।
থানার মতো ২৪ ঘন্টার জন্য বিরামহীন সেবা প্রদানের প্রত্যয় নিয়ে পথ চলা এ বিভাগের। সহিংসতার শিকার নারী ও শিশু ভিকটিমদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন, যাতায়াত, আইনি পরামর্শ, কাউন্সেলিং ও পারিবারিক সমস্যায় মধ্যস্থতা দেয়ার পাশাপাশি মামলা তদন্ত এবং ভিকটিম উদ্ধার এ ডিভিশনের মুল কাজ।
উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সেবা গ্রহণকারী নারী ও শিশুদের একই কেন্দ্র থেকে পুলিশি সেবা প্রদানের পাশাপাশি আইনগত সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে। ভিকটিমের ঠিক কি প্রয়োজন সেটা বিবেচনা করে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নারী ও শিশু ভিকটিমের বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখা হয় এবং নারী পুলিশ সদস্য বিষয়টি তদারকি করেন।
উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন পিপিএম-সেবা ডিএমপি নিউজকে জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে। বেড়েছে কর্মহীন মানুষের হাহাকার ও ক্ষুধা। সেই সাথে বেড়েছে সহিংসতাও। গত মার্চ, ২০২০ হতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। সেবা প্রত্যাশীরা আমাদের কাছে সহায়তা চাওয়ার আগেই আমরা আমাদের সেবার হাত প্রসারিত করেছি অভাবী আর নিম্ন আয়ের মানুষের ঘর পর্যন্ত। মানবতার উপহার নিয়ে ছুঁটে বেড়িয়েছি ঢাকা মহানগরীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় কর্মহীন, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, সিংগেল মাদার ও বিধবা যারা লজ্জায় ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারেনি তাদের এসএমএস এর ভিত্তিতে গোপনে ঘরের দরজায় পৌঁছে দিয়েছি ত্রাণসামগ্রী। ইতোমধ্যে ১০০০ এর বেশী অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে৷ অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকতে নিজেদের বেতন-রেশন উজার করে দিয়েছে এ ডিভিশনের ১০১ নারী পুলিশ সদস্য।
তিনি বলেন, ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগ করোনাকালীন সময় নিরলসভাবে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় ত্রাণও বিতরণ করছে। উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ও একই ভাবে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ করে আসছে। সমগ্র ঢাকা মহানগরী এলাকা এ ডিভিশনের কর্মক্ষেত্র। আমরা সব এলাকার জন্য আমাদের সহায়তা উন্মূক্ত রেখে আহবান করেছিলাম। আমাদের আহবানে অসংখ্য অসহায় মানুষ প্রতিদিন ত্রাণের চাহিদা জানিয়েছেন। চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ মিরপুর এলাকার। তেঁজগাও, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, রমনা, মতিঝিল, লালবাগ, গুলশান ও ওয়ারী এলাকা হতেও সহায়তার জন্য চাহিদা এসেছে৷ কাউকে নিরাশ করা হয়নি সবাইকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। করোনা সময়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে অসহায় মানুষের পাশে আছে এ ডিভিশন।
তিনি ডিএমপি নিউজকে আরো বলেন, করোনা কালের শুরু হতে এখন পর্যন্ত হারানো, ঘর পালানো ও নির্যাতিত গৃহকর্মীসহ অনেক ভিকটিমকে মায়ের মমতায় রাখা হয়েছে এ ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে এ সময়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন উচ্চবিত্ত কর্মজীবী নারীও। তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছে এ ডিভিশন। এ ডিভিশনের অধীন তদন্তাধীন সব মামলার বাদী এবং ভিকটিমের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে যারা আইনি সহায়তার জন্য এ ডিভিশনে এসেছিলেন তাদের সাথেও উর্ধতন কর্মকর্তারা সবসময় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সব প্রান্তের নির্যাতিত নারীদের টেলিফোনে আইনি পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রখেছি আমরা।
আরো জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সহযোদ্ধাদেরও পাশে আছে এ ডিভিশন। চিকিৎসারতদের মনোবল অটুট রাখতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শন কমিটির সদস্য হয়ে এ ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার নিয়মিত পরিদর্শন করছেন হাসপাতালসহ অন্যান্য কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন সেন্টার। নিজ ডিভিশনের করোনা আক্রান্ত সদস্যদের এবং তাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগের মাধ্যমে সব রকম সাপোর্ট দেয়া অব্যাহত রেখেছে এ ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার। অন্যান্য সদস্যদের করোনা মুক্ত রাখতে নেয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। সবাই মিলে ভালো থাকার অসম যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে এ ডিভিশন। বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের একটা ক্ষুদ্র অধ্যায় হয়ে আরও বৃহৎ দায়িত্ব পালনে সদা প্রস্তুত এ ডিভিশনের ১০১ নারী পুলিশ সদস্য ।