গাজা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবারের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ হিসেবে গাজার সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য হামাসের ভূমিকার সমালোচনা করেছে। ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় কুয়েতের উত্থাপন করা খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও ভেটো দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি সহমত জানায় নি আর কোন দেশ। অধিবেশনে উপস্থিত বেশির ভাগ দেশের প্রতিনিধি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতার কারণে ওই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে আর পাস হয় নি।
শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এতে ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় কুয়েতের উত্থাপন করা খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট হয়। রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ দশটি দেশ প্রস্তাব পাস হওয়ার পক্ষে ভোট দেন। চারটি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে। সেগুলো হলো, বৃটেন, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ইথিওপিয়া। একমাত্র দেশ হিসেবে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি দখলদার ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি প্রস্তাবটিকে পুরোপুরি ‘একপাক্ষিক’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি গাজা উপত্যকার সাম্প্রতি সহিংসতার জন্য হামাসের ওপর দোষ চাপান।
পরে কুয়েতের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রও একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। এ প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেন উপস্থিত সদস্যরা। তবে নিজেদের প্রস্তাবের পক্ষে কোন দেশের সমর্থন পায় নি যুক্তরাষ্ট্র। এই ভোটে দেখা যায়, ৩টি দেশ এ প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখান করেছে। আর ১১টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত ছিল। মার্কিন এই প্রস্তাবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়। বরং এতে বলা হয়, হামাসসহ অন্য ফিলিস্তিনি দলগুলো গাজা উপত্যকায় উস্কানিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য হান্নান আশয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারো ইসরাইলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করলো। ইসরাইল গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করার পরেও যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে নির্দোষ ঘোষণা করার চেষ্টা করছে। এই ভেটো দিয়ে ইসরাইলের অরাজকতা, দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনকে বৈধতা দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো গুলিতে ১২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আহত হয় আরো কয়েক হাজার মানুষ। চিকিৎসক ও সাংবাদিকরাও হামলা থেকে রেহাই পায় নি। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় জাতিসংঘে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে কুয়েত। কিন্তু শুক্রবারের ভোটে সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। এ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হয়েছিল।