আমরা কি করি, কিংবা করব, তার আগে আমাদের অন্তরে একটা ইচ্ছা, স্পৃহা জন্মে। যাকে আরবিতে বলা হয় ‘নিয়ত। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো কাজ সম্পাদনে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলা হয়।
মানবজীবনে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ কি কর্ম করে এবং তার কী ফলাফল হবে, তা পৌঁছানোর আগে মহান আল্লাহর কাছে বান্দার মনের গহিনে থাকা ইচ্ছা তথা ‘নিয়ত’ আল্লাহর কাছে দ্রুত পৌঁছায়।
আমি আমার ব্যক্তিগত অভিমতে বলব, শব্দ আর আলোর গতির মতো নিয়ম ও কর্ম। শব্দের চেয়ে দ্রুত যেমন আলোর গতি, ঠিক তেমনি কর্মের চেয়ে নিয়তের গতি বেশি।
মানুষের অভ্যন্তরীণ বাসনা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখতে পায় না, আর তাই নিয়তের শুদ্ধতার ওপর মানুষের কর্মকাণ্ড। মানুষ যা নিয়ত করবে তার তকদিরে তাই বর্তাবে।
‘নিশ্চয় সমস্ত আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিরজত আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যেই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া হাসিলের কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশে হিজরত করে, তার হিজরত সেই উদ্দেশেই গণ্য হবে যে উদ্দেশে সে হিজরত করেছে’ (বুখারি হাদিস নং ৫২)।
একজন মুমিনের সমস্ত কর্মকাণ্ড হবে সৎ নিয়ত ও ইখলাসের ওপর। প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলটুকুই কবুল করেন, যা ইখলাসের সাথে শুধু তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়’ (নাসাই শরিফ হাদিস নং ৩১৪২)।
ইখলাসের সাথে আমল করলে অল্প আমলই হবে নাজাতের জন্য যথেষ্ট। (আল হাদিস) কোনো ব্যক্তি যদি মানুষকে দেখানোর জন্য, সম্মান ও সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ইবাদত, দান সদকা করে থাকে তবে তা সে হিসেবেই গণ্য করা হবে। পরকালে যার কোনো মূল্য থাকবে না।
আমরা অনেক সময় মানুষের কর্মকাণ্ড দেখে বিচার করে ফেলি সে কতটুকু ঈমানদার, সে জান্নাতি না জাহান্নামি। মূলত ব্যক্তি কী ইবাদত করছে তার ভেতরে লুকানো উদ্দেশ্য কী! তা মহান আল্লfহ ছাড়া কেউ জানে না। বিচার দিনে মহান আল্লাহ মানুষের দেখা বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের হিসাব নেবেন না। বান্দার হিসাব হবে তার লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা নিয়তের আমলের ওপর।
‘আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তর আমলের দিকে’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৪৩)।
সহিহ নিয়ত মানবজীবনের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। নবী সা: বলেছেন, ‘কেউ একনিষ্ঠ মনে শাহাদতের প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।’ (সহিহ মুসলিম)
নিয়তের বরকত আকাশসম। ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইখলাসের সাথে কালিমা পড়ে তবে তার জন্য আকাশের দরোজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’ (তিরমিজি, হাদিস-৬৮)।
মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রকাশিত অপ্রকাশিত সমস্ত সহিহ নিয়তের ইবাদত কবুল করেন। আর তাই আল্লাহর একনিষ্ঠ একজন বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত সহিহ নিয়তের ওপর আমল করা। সৎ, স্বচ্ছ, শুদ্ধ নিয়ত বুকে ধারণ করা। যাতে ইহকাল এবং পরকাল দু’জায়গায় আল্লাহর দয়া এবং রহমতের ছায়ায় কাটাতে পারি। জাজাকাল্লাহ খাইরান। তথ্য সূত্র: নয়া দিগন্ত।