পদ্মাসেতুর ২৭তম স্প্যান স্থাপনে ৪০৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ‘৫সি’ নম্বর স্প্যানটি ২৭ ও ২৮ নম্বর খুঁটির উপর বসিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন লকডাউন তখন পদ্মা সেতুতে ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয় খুঁটির ওপর। তাই স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। আর এর আগে পাঁচ নম্বর মডিউলের ‘সি’ স্প্যানটি শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে মাওয়ার ইয়ার্ড থেকে নিয়ে রওনা হয়। ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন সাড়ে ১০টার দিকে স্প্যান নিয়ে ২৮ নম্বর খুঁটির কাছে এ্যাংকর করে। শুক্রবার স্প্যানটি ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ পিলার দুটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সহায়তায় সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু করে। নোঙর ক্রেনটি পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। তারপর দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর স্প্যানটিকে রাখা হয়। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। এভাবেই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়ার পর পদ্মাসেতু আরও ১৫০মিটার দৈর্ঘ্য হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. মুরাদ কাদের।
এর আগে গত ১০ মার্চ ২৬তম স্প্যানটি বসানো হয়। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, দেশে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক থাকলেও পদ্মা সেতুর কাজ থেমে নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের আরো জানান, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আরও দুটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে প্রস্তুতিও চলছে।
বিস্ময়কর হচ্ছে যে দুটি খুঁটির মধ্যে এই স্প্যান বসছে তার একটি ২৭ নম্বর খুঁটি। এই খুঁটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত ১৬ মার্চ। এরপর কিউরিং করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরই এটি উঠনো হচ্ছে। খুঁটি তৈরির পর এত অল্প সময়ে স্প্যান উঠানো ঘটনা এই প্রথম। যেহেতু এই ‘৫সি’ নম্বর স্প্যান রেডি করে একদম জেডির সামনে রাখা ছিল। তাই এটিই আগে স্থাপন করতে হয়েছে।
২৭ নম্বর স্প্যানটি উঠানোর কথা ছিল আগামী ৩১ মার্চ। তবে আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় তিনদিন আগেই এটি উঠানো হল। পদ্মা সেতুর মূল ভিতও এখন সম্পন্ন। ৪২টি খুঁটির ৪১টি সম্পন্ন এখন। বাকী শুধু এখন ২৬ নম্বর খুঁটি । খুঁটির সর্বশেষ প্রক্রিয়া ক্যাপ। এই খুঁটিওর ক্যাপের রড বাধাই হয়ে গেছে। এখন শুধু ঢালাই। কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঢালাইটি সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে এই প্রকৌশলী জানান। এই খুঁটিটি সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে আগামী ১০ এপ্রিল । তবে এর আগেই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে তিনটি স্প্যান বসলেও মার্চে বসছে দুটি স্প্যান। গত ১০ মার্চ এর পাশের ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারে ‘৫ডি’ নম্বরের ২৬তম স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ৩৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ২৭ তম স্প্যান স্থাপনের পর স্বপ্নের পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে আর মাত্র বাকী ১৪টি স্প্যান। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মাসেতুতে ৪১টি স্প্যান বসবে। এরই মধ্যে মাওয়ায় পৌঁছে গেছে ৩৯ স্প্যান। বাকী রয়েছে মাত্র ‘২ই’ ও ‘২এফ’ নম্বরের দুইটি মাত্র স্প্যান। চীনে করোনাভাইরাসের কারণে এই দুটি স্প্যান বাসতে বিলম্ব হচ্ছিল। চীনের উহানের পরিস্থিতি স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার কারণে এই দুই স্প্যান ২০ এপ্রিলের দিকে মাওয়ার পৌঁছানোর টার্গেট রয়েছে। শিগগির স্প্যান দুটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে শিপম্যন্ট করা হবে।
তিনি জানান, চৈনিক নববর্ষের ছুটিতে চীনে গিয়ে যেসব কর্মীরা আটেক ছিলেন এদের অনেক ফিরে এসে ‘সঙ্গনিরোধ’ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়াও ওয়েল্ডিংয়ের কাজে ছয়টি রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৮ মার্চ থেকে ছয়টি রোবট সফলভাকেব কাজ করছে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) নিজস্ব এই রোবটগুলো চীন থেকে নিয়ে আসে।
পদ্মা সেতুর আরেক সুখবর হচ্ছে পাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) টি গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে এই টি গাডর্র স্থাপন হচ্ছে। এপর্যন্ত ৮টি টি গাডার্র স্থাপন হয়েছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এর আগে জাজিরা প্রান্তের সংয়োগ সড়কে টি গার্ডার স্থান করা হয়। এই প্রান্তে টি গার্ডার স্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।