শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতেই অনেককে হিমশিম খেতে হয়। কম আয়ের শহুরে এসব মানুষের আবাসনের সহজ ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবছিলেন কয়েকজন সুইডিশ স্থপতি। তা থেকেই তাঁদের মাথায় আসে এক অভিনব ধারণা।
মানুষ যদি পাখির বাসায় বাস করে, তবে কেমন হয়! ঠিক পাখির বাসা নয়, পাখির বাসার মতো করে বানানো ঝুলন্ত ঘর। ছোট আকৃতির ঘরগুলো আকারে হবে ৫০ বর্গমিটারের। পাখির বাসার মতো করে সেগুলো ঝুলানো হবে পাহাড়-পর্বতের গায়ে। দূর থেকে দেখতে ঘরগুলো গাছের ওপর বানানো ট্রি হাউসের মতো মনে হলেও সেগুলো আদতে তা হবে না। তিনতলা ঘরগুলোতে থাকবে কিচেনসহ দুটি কামরা। সঙ্গে আয়তনে অর্ধেক আরেকটি কামরা।
এ ছাড়া ওপরের তলায় ওঠানামার জন্য থাকবে একটি পেঁচানো সিঁড়ি। ছোট আকারের আধুনিক নকশার ঘরগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে নেশিনবক্স। সুইডিশ স্থপতি এলিজাবেথা ও পনতাসের ধারণার সঙ্গে হাত মেলায় ‘মডার্ন উড হাইসেস’ নামের প্রতিষ্ঠান। তবে নেশিনবক্সের ঘরগুলো দুর্বল স্নায়ুর মানুষদের জন্য নয়। পাহাড়-পর্বতের গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা বাসায় বসবাস সত্যিকার অর্থেই বেশ স্নায়ুবিধ্বংসী।
পাহাড়ের গায়ে ঝুলে ঝুলে বসবাস করতে হলে বুকের পাটা থাকা চাই! তার পরও দক্ষিণ লন্ডনের ক্রিডনের মতো শহরে একচালা বাসায় মাসে ৮০০ পাউন্ড দিয়ে থাকার চেয়ে এটা অনেক উপভোগ্য। বিশেষ করে যাঁরা রোমাঞ্চ ভালোবাসেন। তবে নেশিনবক্সের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, যেকোনো শহরে এটি চাইলেই বানানো যাবে না।
যেমন—লন্ডনের মতো সমতল ভূমির শহরে নেশিনবক্সের ধারণা অকেজো। তবে উত্তর স্ক্যান্ডেনেভিয়াসহ অন্য পার্বত্য এলাকার শহরগুলোর আবাসন সংকট নিরসনে এটি বেশ কাজে দিতে পারে। বসবাসের জন্য এমন অভিনব ঘরবাড়ির ধারণা কেন? তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নেশিনবক্স উদ্যোক্তারা। পাখিসহ অনেক বন্য প্রাণী গাছের ওপর, পাথরের খাঁজে কিংবা পাহাড়ের গায়ে তাদের বাসা বানায়। মানুষ তাদের কাছ থেকে শিখতে পারে।
যেখানে আবাসন সংকট নিরসনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কম, সেখানে তা প্রয়োগ করতে পারে। নেশিনবক্সের ‘বার্ড হাউস’গুলো এখনো ধারণা আর নকশার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে উদ্যোক্তা স্থপতিরা আশা করছেন, খুব দ্রুতই সুইডিশ নির্মাণশিল্পের অভিনবত্বে আরেকটি পালক যোগ করতে ধারণাটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু হবে।