বৈধভাবে পৃথিবীর যে কোনো দেশে ভ্রমণের অন্যতম প্রধান শর্ত পাসপোর্ট। এটি একজন নাগরিকের স্বীকৃতির সবচেয়ে বড় দালিলিক প্রমাণপত্র। সব দেশই তাদের নাগরিকদের জন্য পাসপোর্ট অনুমোদন করে থাকে। নানা দেশে ভ্রমণের চাবিকাঠি হচ্ছে পাসপোর্ট। কিন্তু সব দেশের পাসপোর্ট একই মর্যাদা সম্পন্ন নয়।
আসুন তাহলে জেনে নিন পাসপোর্ট সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য-
- প্রথম পাসপোর্টটির কথা জানা গিয়েছিল প্রাচীন বাইবেলে। বুক অফ নেহেমিয়া-তে পারস্যের রাজা প্রথম আরটাজেরেস জুডিয়ার ভেতর দিয়ে নিরাপদে চলাচলের অনুমতি দিয়ে তার এক সরকারি কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।
- সুমেরু প্রভা দেখতে পাবেন শুধু স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পাসপোর্টে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোন দেশের পাসপোর্ট যদি ইউভি আলোর নীচে রেখে পরীক্ষা করেন তাহলে আপনি ‘নর্দার্ন লাইটস’ বা সুমেরু প্রভা দেখতে পাবেন।
- পাসপোর্টে ছবি যুক্ত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। এক সময় পাসপোর্টে কোন ছবি লাগতো না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পাসপোর্টে ছবি লাগানোর প্রথা শুরু হয়। এর কারণ হলো এক জার্মান গুপ্তচর জাল আমেরিকান পাসপোর্ট নিয়ে ব্রিটেনে ঢুকে পড়েছিলেন।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার ওজন বাড়লে বা কমলে আপনাকে নতুন করে পাসপোর্ট তৈরি করতে হবে।
- এক সময় যে কোন ছবি পাঠানো যেত পাসপোর্টের জন্য। আগে পাসপোর্ট তৈরির জন্য যে কোন ধরনের ছবি পাঠালেই চলতো। এমনকি চাইলে আপনি পারিবারিক ছবিও পাঠাতে পারতেন।
- ছয় মাসে আগেই পাসপোর্ট নবায়ন করুন। পাসপোর্ট নবায়ান না করলে আপনাকে বিদেশে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। পাসপোর্ট নবায়নের তারিখ নিয়ে কোন টালবাহানা না করাই ভাল। ইয়োরোপীয় ইউনিয়নসহ কোন কোন দেশ চায় সে দেশে ঢোকার পর আপনার পাসপোর্টে ৯০ দিন সময় থাকতে হবে। কিন্তু চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মত কিছু দেশ চায় পাসপোর্টে ছয়মাস সময় থাকতে হবে। এটা তারা চায় যেন কোন দেশে বেড়াতে গিয়ে আপনি আটকে না পড়েন। এবং সময় থাকতে সেই দেশ ছাড়তে পারেন।
- কুইন্সল্যান্ড হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পাসপোর্ট লাগে না। পাপুয়া নিউ গিনি যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন এই গ্রামগুলোর সাথে অস্ট্রেলিয়ার এক বিশেষ চুক্তি হয় যেখানে বলা হয় এই গ্রামের বাসিন্দারা কোন পাসপোর্ট ছাড়াই কুইন্সল্যান্ড প্রদেশ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পারবেন।
- ভ্যাটিকানে কোন ইমিগ্রেশন নেই। ভ্যাটিকান, ইতালীর রাজধানী রোমের কেন্দ্রস্থলে স্বাধীন এক রাষ্ট্র। ভ্যাটিকান একটি স্বাধীন ক্যাথলিক রাষ্ট্র হলেও এর কোন ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল নেই। তবে ক্যাথলিক ধর্মমতের প্রধান গুরু পোপের একটি পাসপোর্ট রয়েছে, যার নম্বর ভ্যাটিকান-১।
- অনেক আমেরিকানের কোন পাসপোর্ট নেই। আমেরিকানদের মধ্যে অনেকে জীবনেও বিদেশে যাননি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট নাগরিকের সংখ্যা ৩২১৩৬২৭৮৯। কিন্তু পাসপোর্ট রয়েছে যাদের কাছে তাদের সংখ্যা মাত্র ১২১৫১২৩৪১ জন।
- পলিনেশিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্র টোঙ্গা ২০ হাজার ডলারে পাসপোর্ট বিক্রি করেছে। এই রাষ্ট্রের রাজা প্রয়াত চতুর্থ তৌফাহাউ টুপাউ সে দেশের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিদেশিদের কাছে পাসপোর্ট বিক্রি করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
- ফিনিশ এবং স্লোভেনিয়ান পাসপোর্ট ছবির ফ্লিপ-বুক হিসেবে কাজ করে। আপনার যদি ফিনিশ কিংবা স্লোভেনিয়ান পাসপোর্ট থাকে, তাহলে সেটার পাতা যদি দ্রুত উল্টাতে থাকেন, তাহলে দেখবেন পাসপোর্টের পাতার নীচের একটি একটি ছবি দ্রুত নড়তে থাকবে।
- নিকারাগুয়ার পাসপোর্ট জাল করা সবচেয়ে কঠিন। জালিয়াতির বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ার পাসপোর্টে রয়েছে নানা ব্যবস্থা। নিকারাগুয়ার পাসপোর্টে হলোগ্রাম এবং জলছাপসহ ৮৯টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত পাসপোর্ট।
- ব্রিটেনের রানীর কোন পাসপোর্ট নেই। রানীর দ্বিতীয় এলিজাবেথকে পাসপোর্ট নিয়ে কোন দু:শ্চিন্তা করতে হয় না। কারণ যুক্তরাজ্যের জনগণকে তার নামেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। আর সে কারণেই তার নিজের কোন পাসপোর্ট নেই। তবে রানীর গোপন দলিলের জন্য পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। রানীর তরফে যেসব বার্তাবাহক রয়েছেন তারা নানা ধরনের গোপন দলিল সারা বিশ্বে পৌঁছে দেন। আর এই দলিলগুলোর জন্য পাসপোর্ট তৈরি করা হয়।