ডিএমপি নিউজঃ আপনি হয়ত বিদেশ যাবেন কিংবা বিদেশে অবস্থান করছেন, সেকারণে অথবা অন্য কোন কারণে আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন।এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে হয়তো কোন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে গেছেন। টাকার বিনিময়ে তারা সরবরাহ করল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। কিন্তু সেটা আসল নাকি জাল তা কি কখনো ভেবেছেন? নাকি ব্যস্ততার কারণে যাচাই করার কথা ভুলে বসে আছেন। যাহোক দালাল চক্রের খপ্পর এড়িয়ে সঠিক উপায়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেয়ার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন করতেই এই লেখা।
কেন দরকার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটঃ
বিদেশগামী অথবা বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দেশ নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট চায়। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট চাওয়ার অর্থ যাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে তিনি কোন অপরাধী নন এবং তার বিরুদ্ধে দেশের থানা গুলোতে কোন ফৌজদারী মামলা নেই । সে দেশের বাইরে গেলে রাষ্ট্রের কোন আপত্তি নেই।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়াঃ
সঠিক নিয়ম হল নির্ধারিত ফরমে বাংলায় বা ইংরেজিতে মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার অথবা জেলায় পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করতে হয় । আবেদনের সাথে ৫০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট কপি, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হয় । আপনার আবেদনে দেওয়া তথ্যসমূহ পুলিশ যাচাই করে একটি প্রতিবেদন দিবে। পুলিশ প্রতিবেদনের পর ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টার সাইন হয়ে আসার পর থানার মাধ্যমে আপনাকে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ৭/১০ দিন সময় লাগতে পারে। বর্তমানে ম্যানুয়াল আবেদনের পাশপাশি অনলাইনেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন ও সংগ্রহ করা যায়। খুব সহজে এবং অল্পদিনেই কোন হ্যাসেল ছাড়া ঘরে বসেই নেওয়া যায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
এরপরও কেন প্রতারিত হচ্ছেন?
যথাযথভাবে আবেদনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে “হয়রানি” ও সময়ের অপচয় মনে করে অনেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য দালালের শরণাপন্ন হন। অনেক ক্ষেত্রে কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি সার্টিফিকেট প্রার্থীদের একাজে প্রলুব্ধ করে। দালালের কাছ থেকে নেয়া সেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সঠিক কিনা বা তার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু তা কি কখনো যাচাই করা উচিত। কেননা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পুলিশই দিবে। কোন দালাল নয়। এ খুব সহজ বিষয়। দালালের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিলে জেনে রাখুন নিশ্চিতভাবেই আপনি প্রতারিত হলেন। হয়রানি কিন্তু শেষমেষ আপনারই হবে। অর্থ ও সময় দুটোই যাবে, কাঙ্খিত সার্টিফিকেটও মিলবে না।
প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান ও উদ্ধারঃ
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির কয়েকটি অভিযানে আটক হয়েছে বেশ কিছু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সরবরাহকারী দালাল চক্রের সদস্য। গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে এ সম্পর্কে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এসব অভিযানে জব্দ করা হয় ৪২৪১ টি জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের (স্বরাষ্ট্র,পররাষ্ট্র,আইন ও মুক্তিযোদ্ধা) ২২ টি সীল, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এর ৭০ টি সীল, বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ ও থানার ১২৫১ টি গোল সীল ও ০৭ টি কম্পিউটার এবং ০৫ টি প্রিন্টার উদ্ধারসহ ১৫ জন আসামী গ্রেফতার করে। এ সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে গুলশান, যাত্রবাড়ি, মতিঝিল ও পল্টন থানায় জাল জালিয়াতিসহ প্রতারণার মামলা হয়েছে।
কিভাবে তৈরি করা হয় জাল সার্টিফিকেটঃ
সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ নুরুল আমিন ডিএমপি নিউজ কে জানান, এ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান করে জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরির মালামালসহ জালিয়াতি চক্রের ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দালাল ও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে জালিয়াত চক্র গ্রাহক সংগ্রহ করে। সংগৃহীত গ্রাহকের নাম ঠিকানা কম্পিউটার সফটওয়ার (Adobe Photoshop ও Adobe Elastator ব্যবহার করে) এর মাধ্যমে জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে প্রিন্ট করে।
তিনি আরো জানান, জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরীর জন্য কাগজ সমূহ বাজারের ষ্টেশনারী দোকান থেকে ক্রয় করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর সমান করে কেটে নেয় । প্রত্যেকটি জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য দু্ই হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয় বলে জানান তিনি।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাযথ পদ্ধতি কি?
পাঠক আপনি কিংবা আপনার পরিবার অথবা আপনার আত্মীয়স্বজন নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন না করলে এমন প্রতারণার শিকার হতে পারেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল-
১। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদনের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক/সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখায় কোড নং (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) এর অনুকুলে ৫০০/= মূল্যমানের ব্যাংক চালান করতে হবে।
২। একজন বিদেশগামী যাত্রী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে হলে অবশ্যই মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার অথবা জেলায় পুলিশ সুপার অফিসে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট আবেদন ফর্মে অথবা সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে।
৩। আবেদনের সাথে ব্যাংক ড্রাফট কপি,পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্র ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল এর প্রদত্ত সনদ পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে।
৪। আবেদন পত্র জমার পর সংশ্লিষ্ট অফিস হতে সিরিয়াল নাম্বার ও তারিখ উল্লেখ সহ টোকেন দেয়া হয়।
৫। পুলিশের তদন্তক্রমে সাত কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
৬। প্রত্যেকটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইংরেজি ভাষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়িত করা হয়।
এছাড়াও আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ঘরে বসেই অনলাইনে খুব অল্প সময়ে ও সহজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করবেন যেভাবে।
আসছে…
কিভাবে সনাক্ত করবেন জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট?
পড়তে চোখ রাখুন ডিএমপি নিউজ এ…