মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন ও রেলসংযোগ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ পরিদর্শন করতে আজ ১৪ অক্টোবর’১৮ রবিবার বেলা সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওয়ানা দিয়ে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন (মাওয়া প্রান্ত) করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচন (মাওয়া প্রান্ত) এবং মূল নদীশাসন কাজ সংলগ্ন স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজেরও উদ্বোধন করেছেন তিনি।
দেশে প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু হয়ে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এগিয়েছে ৭০ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী নিজের চোখে আজ এ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ, কে, এম শাহজাহান ।
প্রধানমন্ত্রী দুপুরে প্রধানমন্ত্রী জাজিরা পয়েন্টে সেতুর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিবচরে যাবেন এবং ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কাঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট’-এর প্রথম পর্যায়ের কাজ জাজিরা ও শিবচর হয়ে মাওয়া ও ভাঙ্গার মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করবে। আর পদ্মা বহুমুখী সেতুর মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে বৃহত্তর সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
চীন সরকার মনোনীত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি. চীন জিটুজি পদ্ধতির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ ব্যাপারে চীন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড সেতুপথ নির্মিত হবে। এই সেতুপথে একাধিক লিফটসহ দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন ও দুটি লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতু নির্মাণ ও রিভার ট্রেইনিং কাজের উদ্বোধন করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নয়া দিগন্তের সূচনা হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
তাঁরা আরো জানান, এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহের লোকদের দীর্ঘ ভোগান্তি লাঘব হবে। দেশের অন্য প্রান্তে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের যাত্রার সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টা কমে যাবে।
কংক্রীট ও ইস্পাত কাঠামোয় তৈরি দুই স্তরের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন আর নীচ দিয়ে চলবে রেল।
সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলে দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মাসেতু’ নির্মাণ করছে। মূল সেতু, নদী শাসন, দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণসহ ৫ ভাগে সম্পন্ন হচ্ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এই সেতুতে থাকবে মোট ৪২টি পিলার। এগুলোর প্রতিটি ৬টি পাইলের ওপর দন্ডায়মান থাকবে। পিলারগুলোর ওপরে বসানো হবে ইস্পাতের স্প্যান। সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসবে।
মূল সেতু নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। নদী শাসন কাজে নিয়োগ করা হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনকে এবং দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লি.। এই সেতুর নির্মাণ কাজ তদারক করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট ও কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন এন্ড এসোসিয়েটস। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।