প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পাচঁ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি চলমান এসএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ১১ সদস্যের একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে দুই পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হবে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রশ্নফাঁসে জড়িত কাউকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়াচ্ছে যারা, তারা ধরা পড়বেই। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ে বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী।
১১ সদস্যের কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের দুই জন, শিক্ষা বোর্ডের তিনজন এবং বিটিআরসির একজন প্রতিনিধি থাকছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এ কমিটি প্রয়োজন মনে করলে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বেলা সোয়া ৩টার দিকে শুরু হওয়া সভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও সভায় ডাকা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের) মহাপরিচালক।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এই যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার যারা হোতা, যারা এর সঙ্গে স¤পৃক্ত সে ধরনের যারা অপরাধী তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে, চিহ্নিত করে দিতে পারলে, সঠিক প্রমাণিত হলে পাচঁ লাখ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে।’
কমিটির কার্যক্রমের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষার সময় যেসব প্রশ্ন ওঠেছে যে (প্রশ্ন) ফাঁস হয়েছে সেটা ঠিক বা ভুল এসব বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে এবং তার ফলে পরীক্ষার্থীদের উপর কী প্রভাব পড়েছে, কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ কী হয় নাই, এসব মিলিয়ে পরীক্ষাটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় সেটা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা সম্পর্কে সুপারিশ করবেন, এজন্য একটি কমিটি আমরা করে দিচ্ছি। এই কমিটি এসএসসি ও সমমানের পুরো পরীক্ষা মনিটর করবেন।’
সভার শুরুতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘ফেসবুকে আসল বা নকল যাই হোক- প্রশ্নপত্র নিয়ে কোনো পোস্ট দেওয়ায় জড়িতকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।’
সচিব আগামী পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বা এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, ‘কোনো শিক্ষক বা কারও কাছে কেন্দ্রে মোবাইল ফোন পেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা পর কেন্ত্রে ঢুকতে আর কোনো শিথিলতা গ্রহণ করা হবে না।’
এছাড়াও আগামীতে এমসিকিউ প্রশ্ন পুরোপুরি বন্ধ করা, প্রয়োজনে ৫০ সেট প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেয়াসহ এ বিষয়ে শিক্ষাবিদদের নিয়ে সেমিনার করার প্রস্তাব করেন সোহরাব হোসাইন।