ডিএমপি নিউজঃ আপনার নিরাপত্তার ব্যত্যয় যেখানে, সেখানেই আপনার সুরক্ষায় পুলিশ। এ কথাটি দিয়েই শুরু করছি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা নামছে আজ। বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব এই ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। মাসব্যাপী এ বই মেলা প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উৎসবমুখর পরিবেশ ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল । আজ মেলার শেষ দিন। যেমনি পাঠক ও লেখকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। তেমনি মেলায় পুলিশের উপস্থিতি, নিরাপত্তা বেষ্টনী ও পুলিশী কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো।
পুলিশী কার্যক্রমের তেমনি একটি অংশ ছিল পুলিশের ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টার’। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বই মেলায় সরব ভূমিকা পালন করেছে পুলিশের লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টারটি। মেলায় আগত কোন দর্শণার্থীর সাথে থাকা কোন শিশু হারিয়ে গেলে এই লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টারের সহযোগিতায় হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে তার পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হত।
পুলিশের এই মানবিক উদ্যোগ সম্পর্কে কথা হয়েছিল মেলায় আগত রিফাত হোসেনের সাথে। তিনি পেশায় একজন মিউজিশিয়ান। তিনি ডিএমপি নিউজকে বলেন, দেখুন আমি আমার ছোট শিশুকে নিয়ে মেলায় এসেছি। এখন যদি আমার বাচ্চাটা হারিয়ে যায় তাহলে এতো লোকের মাঝে আমার বাচ্চাটাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পুলিশের এই পজেটিভ ব্যবস্থাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কেননা এই লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টারের মাধ্যমে যে কারো হারানো শিশুকে পেতে কোন সমস্যা হবে না। ভবিষ্যতেও আমরা পুলিশের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।
লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টার থেকে জানা যায়, মাসব্যাপী এই বইমেলায় বাবা-মার সাথে এসে মেলা প্রাঙ্গণে হারিয়ে যাওয়া বা কুঁড়িয়ে পাওয়া প্রায় ৬ থেকে ৭ জন শিশুকে মাইকিং করে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বইমেলাকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ছিল নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বইমেলার ভেতরে ও বাহিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোষাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ মোতায়েন ছিল। সমগ্র বইমেলা ছিল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। পাশাপাশি বইমেলাকে ঘিরে ছিল পুলিশের একাধিক ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও বইমেলায় স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে মোতায়েন ছিল ডিএমপি’র স্পেশাল ইউনিট সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ও ডগ স্কোয়াড।
কেমন ছিল বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এই বিষয়ে মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে ডিএমপি নিউজের সাথে কথা হয়েছিল মেলায় আগত কয়েকজন দর্শণার্থী ও প্রকাশকদের সাথে।
তাদের মধ্যে একজন মেলার অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথ মেলায় পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে বলেন, মেলায় আগত দর্শণার্থীদের নিরাপত্তায় সর্ব সর্তক ও দৃশ্যমান ছিল পুলিশ। পুলিশের তৎপরতায় মানুষ নিঃসংকোচে বইমেলায় এসেছে। বিশ্বের কোথাও এমন মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয় না। শুধুমাত্র বাংলাদেশে মাসব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। মাস জুড়ে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল প্রশংসার দাবিদার।
এ বিষয়ে আরো কথা হয়েছিল মেলায় আগত শেরেবাংলা এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির ছাত্রী কাকলী আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, দেখেই মনে হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। বিশেষ করে নারী পুলিশ রয়েছে মেলার প্রত্যেকটি গেইটে। মেলায় যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করছি। তিনি আরো বলেন, বইমেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়। সেখানে আমি একটি মেয়ে মানুষ। শুধুমাত্র ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই শুধু আমি না প্রত্যেকটি মেয়ে ভালোভাবে বইমেলা উপভোগ করছে। এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে প্রত্যেকের বইমেলায় আসা উচিত।
কথা হয়েছিল বইমেলায় আগত সুলতান আহমেদ নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সাথে। তিনিও জানান একই কথা, এ পর্যন্ত প্রায় সাত দিন মেলায় এসেছেন। তার মতে, মেলায় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল চোখে পরার মতো। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়নি। তাই ইচ্ছে মতো মেলায় ঘোরাঘুরি করেছি। মনের মধ্যে কোন প্রকার নিরাপত্তা সংশয় কাজ করেনি।
মেলার আরেক দর্শণার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এম, এইচ রনি বলেন, মেলায় এসে পানির খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল। পানির জন্য এদিক-ঐদিক ছুটছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সুপেয় পানির ট্রলির দিকে। সেখান থেকে পানি পান করে তৃষ্ণা মিটালাম। পুলিশের এই উদ্যোগটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। এছাড়াও মেলায় আসার পথে রাস্তার দু’পাশে কোন প্রকার হকার্স চোখে পড়েনি। তাই পরিবেশটা ছিল খুব সুন্দর। মানুষ নির্বিঘ্নে মেলায় প্রবেশ করতে পেরেছে। সত্যি অন্যরকম পুলিশী সেবা।
যাই হোক সবার মনে আকাংখা রেখেই শেষ হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আবার আগামী বছরের প্রত্যাশায় থাকবে লেখক ও পাঠকরা। সেই সাথে বই মেলায় শেষ মুহূর্তের বিক্রিও চলছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বই বিক্রির অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশকরা।