ডিএমপি নিউজঃ বঙ্গবন্ধু এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, আমরা তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদকত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে “বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন” আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি।
আজ ২৫ আগস্ট ২০২২ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। অনু্ষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) , অতিরিক্ত আইজিপি স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ ও সভাপতি , বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমার সেদিন বিশ্বাস হচ্ছিল না যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে। আমি থমকে গিয়েছিলাম। আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম, শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, তার বাড়িতে বঙ্গমাতাসহ তাঁর পরিবারের সবাই সেদিন শাহাদত বরণ করেছেন। সেখানে পুলিশের এএসআই শাহাদত গ্রহণ করেছেন। যিনি বীরত্বের সাথে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমাদের কপালে যে কালো দাগ, এটা আমরা অনেকদিন ধরে বয়ে বেড়িয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশ আমি ঘুরে বেড়িয়েছি। সেখানে সব দেশ থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হতো, তোমরা সেই জাতি, যেই জাতি তোমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছো।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের কোন জায়গায় কিছু ছিল না, খাদ্য ভান্ডারে খাদ্য ছিল না। আমাদের ব্যাংকে সঞ্চয় ছিল শূন্য। শার্ট পরবো, প্যান্ট বানাবো সেই কাপড়টাও ছিল না। সারা বাংলাদেশ একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সারা পৃথিবী থেকে তিনি সাহায্য পেয়েছিলেন। বিশ্বের সব নেতা তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, সম্মান করতেন, যেকোনোভাবেই তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতেন।
পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যখন দুঃসময় আসে তখন পুলিশ ঘুরে দাঁড়ায়। সেই ২৫ শে মার্চে যেমন তাঁরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্যও যেমন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তেমনি কোভিডের সময়ও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন সব সময় সম্মুখ সেনা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই জন্য আমরা বোধহয় একটা স্বস্তির জায়গায় এসেছি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সবার জন্য স্বাস্থ্য, সবার জন্য শিক্ষা, সবার জন্য বাসস্থান এই স্বপ্ন দেখতেন। আজকে তাঁরই কন্যা যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আজকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয় ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। সেজন্যই আমাদের দেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
মুখ্য আলোচক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাকশাল নিয়ে অনেক অসত্য কথা প্রচার করা হয়। সত্যি বলতে আওয়ামী লীগের মধ্যে বাকশাল নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে, ভয় ভীতি আছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ থেকে আসার দুই মাস পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের পরিকল্পনা করতে লাগলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতি দমন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সমস্ত সৃজনী শক্তিকে মূলধারায় নিয়ে আসা। তিনি অনেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বামপন্থীর দুটি ধারা। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও মস্কোপন্থী মুখ্য নেতা ছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। এই দুজনেই খুব শক্ত ভাষায় সমর্থন করলেন বাকশালকে। বঙ্গবন্ধু আরও উৎসাহ বোধ করলেন। বঙ্গবন্ধু কখনো সমাজতান্ত্রিক ছিলেন না। তিনি সমাজতন্ত্র থেকে ভালো ভালো উপাদান নিয়ে সমতাধর্মী উন্নয়ন চেয়েছিলেন।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, সমস্যা হলো ৭০ সনে ২৮ শতাংশ মানুষ নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এবং তাদের দেশ-বিদেশের প্রভুরা এটাকে বড় ধরনের পরাজয় মনে করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর উদারতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মেজর ডালিমের তখন র্যাংক ব্যাজ নেই। তিনি গেটে আসলেন। আমি তাকে বললাম আপনি কি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করবেন। তখন মেজর ডালিম শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বললেন, বলেই দেখেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বলার সঙ্গে সঙ্গে বললেন হ্যাঁ, নিয়ে আসো, আমার ছেলে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে আলোচনা সভা আয়োজন করেছে তা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
সিনিয়র সচিব আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকীর পরে একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে যারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে খুব বেশি জানেনা। কারণ স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং দেশাত্মবোধ নিয়ে আমরা সেভাবে কথা বলি না। আমরা যদি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য পর্যায়ে এরকম আয়োজন করি তাহলে আমরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ হবো এবং আমাদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে পড়বে।
আইজিপি বলেন, জাতিসত্তা, পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তার বিকাশ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এসেছে। যারা অবয়বে বাঙালি তারা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে, নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলো এবং বাঙালি জাতির ক্ষেত্রেও আদি পাপের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে যা হবে যত সহস্র বছর এই জাতি অস্তিত্বলিপিতে থাকবে, ততবছর এই শোক বাঙালি জাতিকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন থেকে ফেরত আসছিলেন দেশে। তখন সে দেশের সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছিল- আপনি যেখানে ফিরে যাচ্ছেন সেখানে শুধু ধ্বংস। আপনি সেখানে যেয়ে কি করবেন। এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ মাই ল্যান্ড অ্যান্ড আই হ্যাভ মাই পিপল।’ এর মানে দেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে ভালোবাসা, দেশের মানুষের প্রতি তার যে ইস্পাত কঠিন আস্থা ও বিশ্বাস তা তিনি মনোব্যক্ত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে যারা বলেছিলেন, এ দেশ টিকবে না। কিন্তু তাদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন, তার জনগণ, আজকের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত।’ যোগ করেন ড. বেনজীর আহমেদ।
ড. বেনজির বলেন, আমরা যেমন শোকাহত হবো, একইভাবে জাতিকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় এগিয়ে নিতে সদাজাগ্রত থাকবো। সদাজাগ্রত থাকার মাধ্যমে আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠন করতে সক্ষম হবো। এটি আমাদের দ্বারপ্রান্তে এখন।
সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। অথচ মাত্র চার বছরের মাথায় ৭১ এর পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন যেমন বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের ঘটনা ঠিক তেমনিভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা বাঙালির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও লজ্জাজনক ঘটনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিহত পুলিশ সদস্য এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্মাননা স্মারক তাঁর পুত্র মাহফুজুর রহমানের হাতে তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।