দেশের চিকিৎসা সেবারমান বিশ্বমানের করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত দেশের ৪২টি মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট গুলোর স্নাতকোত্তর শ্রেণির চিকিৎসা শিক্ষার মান বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডাঃ কনককান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম চলতি মাসে শুরুতে দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করেছেন। ছাত্র/ছাত্রী (ডাক্তার) ও শিক্ষকদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলাদা রুমে বসে আলোচনা করে তাদের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন সমস্যা আছে কি-না, তা খুজে বের করে সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য স্নাতকোত্তর শ্রেণী, রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, এমডি, এমএস ও ডিপ্লোমাসহ বিভিন্ন কোর্স ও বিষয়ে গ্রহণকারি উচ্চ শিক্ষাথর্দীদের সুবিধা, অসুবিধাগুলো তদারকি করা হচ্ছে। সমস্যা শুনে তাৎক্ষণিক ভাবে তাদেরকে গাইডলাইন দেয়া হচ্ছে।
ভিসি প্রফেসর কনককান্তি বড়ুয়া জানান, চিকিৎসা শিক্ষার মানকে আর্ন্তজাতিক মানের করার জন্য তাদের এ সরজমিন পরিদর্শন করা হচ্ছে। তারা আলাদাভাবে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের সমস্যা গুলো শুনে সমাধান করার আশ্বাস দেন। যাতে রোগীরা দেশেই উন্নত চিকিৎসা পায়। বিদেশ যেতে না হয় সে ভাবে মেডিক্যাল উচ্চ শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে এ পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপকে সফল করার জন্য ভিসি, প্রো-ভিসি, ডিন, কোর্স ডাইরেক্টরসহ ১০ সদস্যের টিম চলতি মাসের শুরুতে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, এরপর রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করা হবে।
এ ছাড়াও স্পেশালাইজ ইনস্টিটিউট গুলো পরিদর্শন করে চিকিৎসা শিক্ষার গাইডলাইন দেয়া হবে। যেখানে সমস্যা, সেখানে সমাধান করা হবে। চিকিৎসা বিষয় উচ্চ শিক্ষা কোর্স গুলোতে যারা লেখাপড়া করে তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ভার্সির্টি সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ইনস্টিটিউট গুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, ময়নসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, বরিশ্লা শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা ডেণ্টাল কলেজ, এমএ আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ দিনাজপুর, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ, শের-ই-বাংলা নগর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজেস (এনআইসিভিডি)শের-ই-বাংলা নগর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি এন্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনী ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজি, শের-ই বাংলানগর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অফথালমোলজি এন্ড হসপিটাল, শের-ই-বাংলা নগর মেণ্টাল হেলথ, মহাখালী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দ্যা চেস্ট এন্ড হসপিটাল, মহাখালী জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নপসম), সেণ্টার ফর মেডিক্যাল এডুৃকেশন (সিএমই), মহাখালী ন্যাশনাল ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট হসপিটাল, শাহবাগ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালাইড সায়েন্স (বিএসএমএমইউ, মাতুয়াইল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড এন্ড মাদার হেলথ, শের-ই-বাংলা নগর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ। চাঁনখারপুল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স এন্ড হসপিটাল, শের-ই বাংলানগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, মুগদা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডভ্যান্সড নার্সি এডুকেশন এন্ড রিসার্চসহ ৩১ প্রতিষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধিভূক্ত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে রয়েছে, শাহবাগ বারডেম (একাডেমিক), মিরপুর আইসিএইচ এন্ড শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন হসপিটাল, আগারগাঁও লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট হসপিটাল, ফার্মগেট ইস্পানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটাল, মিরপুর ন্যাশানাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অফথালমোলজি, সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুছ আলী মেডিক্যাল কলেজ, মিরপুর কিডনী ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, শাহবাগ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ। মোট ৪২টি সরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত।
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরির্দশন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মেডিক্যাল ভার্সিটির অধিভূক্ত কলেজ ও ইনষ্টিটিউটের রেসিডেন্সি কোর্স, এমডি, এমএস, এমফিল, ডিপ্লোমা উচ্চ শিক্ষা কোর্সে ভর্তিকৃত ডাক্তারদেরকে চিকিৎসা শিক্ষার মূল্যায়ন, তাদের শিক্ষার কোন সমস্যা আছে কিনা,ত াদের প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে শেখানোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, শিক্ষা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন বিষয় বিশ্বমানের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য তারা এবার নতুন কৌশলে পরিদর্শন শুরু করেছেন। পরিদর্শনে গিয়ে ভার্সিটির টিম সম্পর্ণূ ভিন্ন কৌশলে আলাদা ২টি রুমে দেড় থেকে ২ ঘন্টা ধরে উচ্চ শিক্ষার্থীদের সমস্যা শুনেন। এরপর সমস্যার সমাধানে তা নিয়ে শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনায় সমস্যার সমাধানে গাইডলাইন দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনককান্তি বড়ুয়া বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি মেডিক্যাল পরিদর্শন করা হয়েছে। যেখানে সমস্যার কথা জানা গেছে সেখানে তা সমাধানে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কলেজ পরিদর্শন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষার মান বাড়াতে যা কিছু দরকার সবই করা হবে। আর ফরেনসিক মেডিসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (সাবজেক্ট)। এ বিভাগের উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষার সম্প্রসারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই নতুন ফরেনসিক বিভাগ খোলা ও কোর্স চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে তিনি জানান।